ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তি দাবি টিআইবির

ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তি দাবি টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ফারমার্স ব্যাংকের ক্রমাগত ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ কেলেঙ্কারির নতুন তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান উদ্বেগের কথা জানান।

বিবৃতিতে ব্যাংকটির তারল্য সংকট মোকাবিলায় সরকারিভাবে নতুন করে মূলধন জোগানের পরিবর্তে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে সেই শেয়ারের অর্থ দিয়ে ব্যাংকটির আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। গ্রাহকদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুরো ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ফারমার্স ব্যাংকে সংকটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ার কথা গণমাধ্যমে এসেছে। আমানতকারীরা তাঁদের অর্থ আদৌ ফেরত পাবেন কি-না, কিংবা পেলেও কবে নাগাদ পাবেন- তা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুরো ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে সৃষ্ট গ্রাহক হয়রানির এ দায় ফারমার্স ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন শীর্ষ ব্যক্তিরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকা অবস্থায়। অনিয়ম ও জালিয়াতিনির্ভর ঋণ মঞ্জুরে তাঁদের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাঁটিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অযোগ্য ও অসাধু ব্যক্তিদের ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কমিশন ভোগ করে ব্যাংকটির সাবেক পরিচালনা পর্ষদের একাংশ কর্তৃক নৈতিক স্খলনের নির্লজ্জ ও গর্হিত দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, গ্রাহকদের আমানতের অর্থ আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করার পরও অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকবেন, আর অন্যদিকে আমানতের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে গ্রাহকেরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে থাকবেন- তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ঋণ জালিয়াতিসহ অন্যান্য অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ইফতেখারুজ্জামানের মতে, গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যর্থতায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত বোধ করার পাশাপাশি অনেক গ্রাহকের মধ্যে আমানত করা অর্থ দ্রুত তুলে নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টিসহ ঋণ প্রবাহে অস্বাভাবিক প্রবণতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকের এ সংকট দ্রুত সমাধান করা না হলে, বিশেষ করে গ্রাহকদের আমানতের অর্থ চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত না দিলে দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব জটিল থেকে জটিলতর হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিতে সরকারিভাবে নতুন করে মূলধন জোগানের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ব্যাংকটির বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাসহ তাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে সেই শেয়ারের অর্থ দিয়ে গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত প্রদানের দাবি জানায় টিআইবি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *