বিশ্ববিদ্যালয়ে অবারিত হোক গবেষণার দ্বার
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশ সব দিক থেকেই উন্নতি করছে। দেশের শিক্ষা সচেতনতা বেড়েছে তা হলফ করেই বলা যায়। দেশের সব পর্যায়ের মানুষদের একই গতিতে উন্নয়নের বিষয়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে উন্নয়ন থেকে দূরে থাকা মাদরাসাকেও শামিল করা হয়েছে। এই নৈতিক প্রস্রবণগুলোও দেশের শিক্ষা উন্নয়ন থেকে শুরু করে সর্বত্র ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার বিষয়টি এখনো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আর তাই প্রশ্ন উঠছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কোনো গবেষণা হয় না? কোথাও হয় আবারও কোথাও কোনো প্রকারে চালিয়ে নেওয়ার জন্যই হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন বাস্তবমুখী কিছু কাজ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ফল বের করতে না পারায় আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়েও মূল্যায়িত হচ্ছে না।
হতাশার বিষয় হলো, বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সন্দেহ নেই, এর পেছনে অন্যতম কারণ গবেষণার স্বল্পতা। দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বলতে কিছু নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যতটুকু গবেষণা হয় সেখানেও তথৈবচ অবস্থা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণা ছাড়াই চলছে সাত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
মৌলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ খাতে ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শুধু পুরনো জ্ঞান বিতরণ হচ্ছে, নতুন জ্ঞানের আবিষ্কার হচ্ছে না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার বেশির ভাগই খরচ হয় বেতন-ভাতা ও অবকাঠামো নির্মাণে। গবেষণায় বরাদ্দ নামমাত্র। পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ গবেষণা ল্যাব নেই। ভালো গবেষণার জন্য পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা নেই। পদোন্নতি বা নিয়োগের ক্ষেত্রে গবেষণা মূল্যায়ন করা হয় না।
রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন। এ কারণে মেধাবীদের কেউ কেউ অর্থের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম শিক্ষকতায় যুক্ত হচ্ছেন, কেউ পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধার জন্য রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন। ফলে মেধাবী গবেষক পাওয়া যাচ্ছে না। কম বরাদ্দের মধ্যেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ অর্থ খরচ করতে পারছে না। আবার যারা গবেষণা করছেন, সঠিক মান বজায় না রাখায় আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করতে পারছেন না। যেহেতু কোনো রকমে গবেষণা একটা করে অনলাইনে বা ফ্যাকাল্টি জার্নালে প্রকাশ হলেই পদোন্নতি হচ্ছে, তাই মৌলিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তা প্রকাশের চেষ্টাও করা হচ্ছে না। এসব কারণে গবেষণার সংস্কৃতিই গড়ে উঠছে না।
আমরা মনে করি, গবেষণাগারের উন্নয়ন করে আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রমে গতি আনাটা খুবই জরুরি। ইউজিসির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে নতুন উদ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উদ্ভাবনমূলক গবেষণার অপ্রতুলতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী হতে হবে। তাছাড়া গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি সম্ভব।