মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদান সিলেবাসে আসা উচিত
মাওলানা আমিনুল ইসলাম : দেশ গঠনের যে যুদ্ধ, পাক বাহিনীকে হারিয়ে যে দেশ আমরা পেয়েছি যাতে দেশের আলেমদেরও অবদান কম ছিলো না। কিন্তু আজ তারা আলোচনায় নেই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদান পাঠ ও পাঠ্য সিলেবাসে উঠে আসা উচিত। এটা অন্তত কওমী মাদরাসা বোর্ডগুলো তো সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে এই মাসেই বিজয় অর্জিত হয়েছিল। এজন্য এ মাসকে আমরা বিজয়ের মাস বলি।
বিজয়ের মাসের বেশ কয়েকদিন পার হয়েছে। আমার ফেসবুকের বন্ধুগণ নিরবেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। কারো থেকে এখনো কোন প্রকার লিখনী পেলাম না। শুধু এবছর নয়। প্রতি বছরই দেখি, বিজয়ের মাস বলেন আর স্বাধীনতার মাস বলেন, কোন মাসেই বন্ধুদের কোন তোড় -জোড় দেখা যায় না। যখন ১৬ ডিসেম্বর আসে আর ওদিকে ২৬ মার্চ, তখন কিছু দায়সারা ভাবে আমরা কিছু লেখালেখি করি। এরপর আমরা যেন সব কিছু ভুলে যাই।
আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরদের কাহিনী। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি না। স্বাধীনতাযুদ্ধে আলেমদের কি অবদান, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সন্তানদের অনেকের জানা নেই।
আমরা অনেকেই মনে করি, স্বাধীনতা যুদ্ধে মনে হয় আলেম সমাজের কোন অবদান নেই। রণাঙ্গনে কোন আলেম বোধ হয় যায়নি।আর এক গ্রুপ ছিল স্বাধীনতাবিরোধী।কিছু আলেম- উলামা তো তাদের সাথে সখ্যতা গড়ার কারণে আমাদের দেশের মানুষেরা একচেটিয়াভাবে আলেমদের স্বাধীনতার দুশমন মনে করত। অবশ্য সে অবস্থার থেকে কিছুটা নিস্কৃতি মিলেছে। এর জন্য আমাদের দেশের কতিপয় আলেমের অবদান। তাদের মেহনতের ফলে এখন আর আলেমদের গড়পর্তায় স্বাধীনতার দুশমন বলে না। এখন সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে কারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতাযুদ্ধে আলেম সমাজের যে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল এবং কিছু ওলামায়ে কেরাম সরাসরি ময়দানে যুদ্ধ করে ছিলেন। সে সব ইতিহাস আমাদের অজানা।
আমরা জানি না স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের কোন কোন আলেম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদের জানা নেই কোন কোন আলেম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আমাদের কোন কোন আলেম শাহাদাত বরণ করেছিলেন সেটাও আমরা বলতে পারি না।
অথচ আলেমদের কত অবদান মুক্তিযুদ্ধে। ৭১ সালে বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, বহু ওলামায়ে কেরাম, ঘর-ছেড়ে ছিলেন। দেশ রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেছিলেন। সে সব বীর আলেমদের কথা আমাদের কলমে উঠে আসে না। সে ব্যাপারে আমাদের লিখনী একদম নেই বললেই চলে। আমাদের মাদ্রাসার সিলেবাসে আলেম মুক্তিযোদ্ধা বীরদের কথা উল্লেখ নেই। পাঠ্য বইয়ে সেগুলো আলোচনা হলে আমাদের এই প্রজন্মের সন্তানদের জানা থাকত।
আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোন সেমিনার, আলোচনা সভা, কোন রচনা প্রতিযেগিতা, কোন আবৃত্তি, কিছুই হয় না। কোথাও কোন মজলিসেও আমাদের আলেমগণের আলোচনা করতে দেখা যায় না।
এ কারণে আরো অজানা থেকে যাচ্ছে তাদের অবদান। সাধারণ জনতা থেকে নিয়ে আজকালের তরুণ আলেমগণের কাছে একেবারে অজানা সব কিছু।
এজন্য ভাই বন্ধু, আমাদের বীর আলেমদের বীরত্বের কথা, আমাদেরই তুলে ধরতে হবে।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধা আলেমদের বিষয়ে আলোকপাত করা জরুরি।
আমাদের সেমিনার হওয়া দরকার সেই সব বীর আলেমদের কথা নিয়ে। লিখনী চাই মুক্তিযোদ্ধা আলেমদের নিয়ে। বন্ধুদের কলমে বারবার উঠে আসা চাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলেমদের বীরত্ব নিয়ে। তাহলে কিন্তু আমাদের বর্তমান সময়ের আলেমগণ জানতে পারবে ওলামায়ে কেরামেরর মুক্তিযুদ্ধে অবদান ছিল।
আজ তো আমাদের সন্তানদের মনটা ছোট হয়ে থাকে। তারা মুখ উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারে না। তারাও সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে গা ভাসিয়ে নিজেদের ছোট মনে করে।
স্বাধীনতাযুদ্ধে আলেম সমাজের বড় অবদান। পরতে পরতে আলেমদের মেহনত আর কোরবানী। ওলামায়ে কেরামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল। মাদ্রাসার তা’লিম ছেড়ে আলেমগণ ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। একনিষ্ঠভাবে তারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন।
আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সন্তানেরা জানে না আব্দুল হামিদ ভাসানী কে ছিলেন? তিনি কোন জায়গার ফারেগ। তিনি কত উঁচু পর্যায়ের আলেম। আমাদের কিছু কিছু মানুষ মনে করে সে একজন সাধারণ আলেম আর রাজনীতিক। কিন্তু আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দারুল উলুম দেওবন্দের এক সূর্য সন্তান, একজন মেধাবী আলেম ছিলেন। এই বাংলাদেশের প্রতিটি ধুলিকণার সাথে যেন তাঁর অবদান মিশে আছে।সেটা আমাদের আজো অজানা।
মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ কে ছিলেন? আমরা জানি না। দেশের জন্য তাদের কি অবদান সেটাও জানা নেই। এরকম বহু আলেমের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছিলেন। আচ্ছা, ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ.কে আমরা তো একজন বড় বুজুর্গ হিসেবে জানি। কিন্তু তাঁর এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কত অবদান রেখেছিলেন তাকি আমরা জানি?
আসলে আমাদের আলেম সমাজের মুক্তিযুদ্ধে অবদান অপরিসীম। কিন্তু সেগুলো আলোচনা নেই। তাই বন্ধুদের খেদমতে আরজ, আসুন! আমরা আমাদের আলেম সমাজের মুক্তিযুদ্ধের অবদান নিয়ে লেখালেখি করি। আলোচনা পর্যালোচনা হোক তাদের বীরত্ব নিয়ে। এই কামনা রইল।
লেখক : শিক্ষক
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়