স্বাস্থ্য সচেতনতা ও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার (২য় পর্ব)

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার (২য় পর্ব)

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার (১ম পর্ব)

ডা. মোহাম্মদ হাসান জাফরী : সাধারণত ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয় আর এই পানিশূন্যতা রোধে ওরাল স্যালাইনই যথেষ্ট। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতি সাবধানতার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা না থাকা সত্ত্বেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার রোগীর ব্যাকটেরিয়াকে শক্তিশালী হয়ে টিকে থাকতে ও বিস্তার লাভে সহায়তা করে। এতে রোগীর রোগ সারতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতাই এজন্য দায়ী। অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে এখন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। ওষুধের দোকানে কোনো রকমে নাম বলতে পারলেই বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দোকানদার রোগীর বর্ণনামতে নিজের অভিজ্ঞতায় অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করে থাকে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দোকানদারের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায়, সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা না করেই নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ক্রেতাকে সরবরাহ করেন, যা রোগীর জন্য অধিক ক্ষতির কারণ। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানসম্মত ওষুধের পাশাপাশি ওষুধের নির্দিষ্ট মাত্রার বিষয়টিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া নিধনে যদি ৫০০ মিলিগ্রাম নির্দিষ্ট ডোজ হয় আর ওষুধে ৫০০ মিলিগ্রাম লেখা থাকা সত্ত্বেও যদি ওষুধটি ৪০০ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে তাহলে সেটি ব্যবহারেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়ে যেতে পারে, যা রোগীর জন্য বিশেষ ক্ষতিকর। এই যে কম অ্যান্টিবায়োটিক রোগী খাচ্ছেন এটি চিকিৎসক ও রোগী উভয়েরই অজানা। তাই ওষুধ কোম্পানিগুলোর মানসম্মত ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে, যেটি দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের।

কৃষিক্ষেত্রে মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালনে খাবারে স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে টেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক। উন্নত বিশ্বে এখন এগুলো ব্যবহারে দ্বিমত পোষণ করা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের এই স্বল্পমাত্রায় ব্যবহারে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে যা বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কোনো কারণে এই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে তখন এই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না। রোগীর চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আসুন, সাধারণ মানুষ, ওষুধের দোকানদার, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে আমরা সকলে সঠিক প্রয়োজন ব্যতিরেকে যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করি। এতে আপনি, আমি সকলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের আওতার বাইরে থেকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ পাব। পাশাপাশি পরিবেশ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যাতে তৈরি না হয় সেজন্য মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর খাবারে ও কৃষিক্ষেত্রে চাষবাসে স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বর্জন করি। সুন্দর আগামীর জন্য, আমাদের বসবাস উপযোগী একমাত্র পৃথিবীকে রোগমুক্ত রাখতে, রোগাক্রান্তদের সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এবং সর্বোপরি উন্নত বিশ্ব গড়তে সকলে মিলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে আরো সতর্ক হই কারণ সতর্ক হওয়ার এখনই সময়।

লেখক : কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *