- বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনও গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকার মধ্যেই রাষ্ট্রপ্রধান মেয়াদ শেষ করে রাজসিক বিদায় গ্রহণ করলেন
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বঙ্গভবন থেকে কোনও রাষ্ট্রপতির এমন রাজসিক বিদায় কখনও দেখেননি কেউ; আর এই বিদায়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাস হয়ে উঠলেন দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনও গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকার মধ্যেই রাষ্ট্রপ্রধান মেয়াদ শেষ করে রাজসিক বিদায় গ্রহণ করলেন। স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশের ইতিহাসেও প্রথম কোনও রাষ্ট্রপতিকে এমন আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিদায় জানানো হলো।
আবেগ, ভালবাসা ও চোখের জলে জীবন্ত এই কিংবদন্তিকে বঙ্গভবন থেকে বিদায় জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সোমবার সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন।
শপথ পাঠ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি নতুন রাষ্ট্রপতিকে করমর্দন করেন এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর নতুনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি।
এর মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদের মেয়াদের।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুপুরে। দেশের দীর্ঘ সময়ের রাষ্ট্রপ্রধানের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজন করা হয়।
বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল মাঠে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেন প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল।
এরপর নানা রকমের তাজা ফুলে সাজানো হুড খোলা একটি জিপে দাঁড়ান আবদুল হামিদ ও তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম।
হুড খোলা গাড়িটিকে রশি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় মূল ভবন থেকে বঙ্গভবনের প্রধান ফটক পর্যন্ত। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে বিদায়ের পথে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে থাকেন বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের সহকর্মীরা। এদের মধ্যে সচিব থেকে, রাঁধুনি, গাড়িচালকসহ সব পেশার মানুষ ছিলেন।
গাড়িটি যতই প্রধান ফটকের দিকে এগুতে থাকে বিদায়ের বেদনাও বাড়তে থাকে সবার মধ্যে। আবদুল হামিদ সবাইকে হাত নেড়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। হুড খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার তাকে পেছনের বঙ্গভবনের মূল ভবনের দিকে ফিরে তাকাতে দেখা যায়।
বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশে কোনও রাষ্ট্রপতির এমন বিদায় অনুষ্ঠান দেখেননি। রাষ্ট্রপতির এরকম আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় অনুষ্ঠান এই প্রথম।’
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘উনি সফলভাবে সমাপ্তিতে যেতে পেরেছেন। এটা আমাদের গর্বের।’
সুসজ্জিত হুড খোলা গাড়িটি টেনে বঙ্গভবনের মূল ফটকে আনার পর আবদুল হামিদকে নিয়ে নিরাপত্তা দলের সদস্যরা রওনা হন রাজধানীর নিকুঞ্জের উদ্দেশ্যে।
নিকুঞ্জের তিন কাঠা জমিতে করা একটি বাড়িতেই থাকবেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়া আবদুল হামিদ অবসরে লেখালেখি করে কাটাবেন।
প্রায় অর্ধশতকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আবদুল হামিদ। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিকালে ছাত্র রাজনীতি করা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে তার।
সংসদ উপনেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মতো দায়িত্ব সামলেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
জীবনে কখনেই নির্বাচনে পরাজিত হননি আবদুল হামিদ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সদস্য।
সব মিলিয়ে সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কিশোরগঞ্জের হাওড় অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।