আসুন লাইলাতুল কদর তালাশ করি
ইয়াছিন নিজামী ইয়ামিন :: প্রবাহমান রামাদানের বরকত, মাসের মাঝে এটি শ্রেষ্ঠ মাস, এমাসে খোদার বর্ষিত রহমতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়। এমাসে মহান আল্লাহ তায়ালা করুণাবশত তার বান্দাদের প্রতিটি নেক আমল সহস্র গুণ বৃদ্ধি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এবং তিনি এই উম্মাতকে সমস্ত উম্মাতের উপর শ্রেষ্ঠত্বও দান করেছেন। এই কারণে তিনি এই উম্মাতকে এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বানিয়েছেন যা তিনি অন্যান্য জাতি বা কওমকে বানাননি। এটা হাদিস শরিফেও স্পষ্ট এসেছে।
হযরত ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ থেকে একথা বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আবেদদের ইবাদত ও তাদের দীর্ঘ হায়াতের কথা স্মরণ করে চিন্তিত হলেন এই ভেবে যে, আমার উম্মাত তো স্বল্প সময়ে তাদের মত আমল করতে পারবে না, তাহলে কি ওদের থেকে তারা পিছিয়ে থাকবে? তখন আল্লাহ তায়ালা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামকে লাইলাতুল কদরের সুসংবাদ দিলেন, যা হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। মহান আল্লাহ তায়ালা এই বরকতময় রজনীকে কেন্দ্র করে তার পবিত্র কুরআনে একটি সূরাও নাজিল করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ”লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহরিন”। এই সূরায় শবে কদরের চারটি বৈশিষ্ট্য বিধৃত হয়েছে ,
১. এ রাত্রে কুরআন নাযিল হয়েছে।
২. এ রাত্রে ফেরেশতাগণ জমিনে অবতরণ করেন।
৩. এ রাত হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ।
৪. এ রাত্রে সুবহে সাদিক পর্যন্ত কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার নেয়ামত বর্ষিত হয়।
আমরা সবাই জানি, এবার রমজানের আগমন অন্যান্য বছরের রমজানের আগমনের সাথে একেবারেই সাযুজ্যপূর্ণ ছিল না, একরাশ আতঙ্ক আর বেদনা নিয়ে বরণ করতে হয়েছে এই মহাকল্যাণময় মাসকে। এবারের যাপিত সময়টা একটু ব্যতিক্রম। এরপূর্বে এতেকাফের মাধ্যমে আমরা ‘শবে বরাত’কে খুঁজে পাওয়ার প্রয়াস পেতাম। এবারও শবে কদর আসবে, তবে এবার আমাদের শবে কদরকে খুঁজতে হবে ইনফিরাদি কিংবা পরিবার পরিজনকে সাথে নিয়ে।
এই রাতটি সবশ্রেষ্ঠ একটি রাত, তাই এতে কোন প্রকার শৈতিল্য প্রদর্শন কিংবা আলসেমির সুযোগ নেই। কেননা হাদিস শরীফে এব্যপারে রূঢ়ভাবে তিরষ্কৃত করা হয়েছে, বলা হয়েছে : শবে কদরে যে ইবাদত থেকে বঞ্চিত হল, সে বড়-ই হতভাগা। এজন্য অবশ্যই শবে কদরের সন্ধান থাকা চাই এবং সম্ভাবনাময় রাতগুলোতে মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে ইতমিনানের সাথে আদায় করা চাই। কেননা হাদিস শরীফে এসেছে হযরত আনাস ইবনে মালিক রা: থেকে বর্ণিত : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি পুরো রমজানের মাগরিব ও ইশা জামাতের সাথে আদায় করে, সে শবে কদরের বড় একটি অংশ পেয়ে যাবে। [কানযুল উম্মাহ;৩৭০৭]
শবে কদরের দু’আ সম্পর্কে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে ; সেটা হল : আম্মাজান হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি জানি যে, এটা শবে কদর, তাহলে আমি কি দু’আ করবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম বললেন, তুমি এই দু’আ পড়– ”’আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু’য়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”'[ তিরমিযি-২/১৯১, হা,৩৫১৩]
আমরা এই মহাবরকতময় মাসের শেষ দশকে প্রদার্পণ করতে যাচ্ছি। আসুন আমরা শবে কদর তালাশ করি, এবং আমাদের পূর্ব কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার অনলে দগ্ধ হয়ে বিধাতার কাছে প্রাথনা করি সমগ্র মানবজাতির জন্য।
১৪-০৫-২০২০
শেষ ০৩.৪১