ইসলাম গ্রহণ করেছেন আয়ার‌ল্যান্ডের গায়িকা সিনিড ও’কনর

ইসলাম গ্রহণ করেছেন আয়ার‌ল্যান্ডের গায়িকা সিনিড ও’কনর

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ইসলাম হচ্ছে– তাওহিদের স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করা, আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে নতি স্বীকার করা, শিরক ও শিরককারীদের থেকে মুক্ত থাকা। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও সার্বজনীন ধর্ম, যা এর আগে অনেক নবী ও রাসুল-এর প্রতি নাযিল হয়েছিল। তারা আরও বিশ্বাস করে যে, কুরআন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত সর্বশেষ জীবন বিধান। ইসলাম প্রেম, ভালোবাসা, শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম।

ইসলাম ধর্মের প্রেম, ভালোবাসা, শান্তি, নিরাপত্তার ও উদারতা দেখা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছেন আয়ার‌ল্যান্ডের বিখ্যাত গায়িকা সিনিড ও’কনর। একইসঙ্গে তিনি নাম পরিবর্তন করেছেন। এখন থেকে তার নতুন নাম শুহাদা ডাভিট।

১৯ অক্টোবর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ধর্ম পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়েছেন এই গায়িকা। তিনি টুইট বার্তায় লিখেন, আমি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, আমি মুসলমান হয়েছি। এটি যেকোনও বুদ্ধিমান ধর্মতত্ত্ববিদের সফরের স্বাভাবিক সমাপ্তি। সব ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার পর সেগুলো আমাকে ইসলামের দিকেই ধাবিত করেছে। এর ফলে বাকি সব ধর্মগ্রন্থ প্রয়োজন অতিরিক্ত। তিনি আরও লিখেন, আমাকে আরেকটি নতুন নাম দেয়া হবে। সেটা হচ্ছে শুহাদা। আরবি এই নামটির অর্থ হচ্ছে শহিদ।

গত বছর ও’কনর তার নাম মাগডা ডাভিট হিসেবে পরিবর্তন করেন। তার ভাষায় ‘বাবা-মায়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত’ হতে তিনি এই নাম বেছে নিয়েছেন। ‘নাথিং কম্পেয়ার্স টু ইউ’ গানের গায়িকা তার টুইটারের প্রোফাইল পিকচারও পরিবর্তন করেছেন। নাইকির লগো ও স্লোগানযুক্ত ওই প্রোফাইল পিকচারে লিখা আছে- ওয়্যার আ হিজাব, জাস্ট ডু ইট। ডাভিটের সাম্প্রতিক পোস্টগুলোর মধ্যে রয়েছে নিজের কণ্ঠে দেয়া আজানের অডিও এবং হিজাব পরিহিত ছবি।

৫১ বছর বয়সী এই গায়িকা ‍এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, তিনি ‘খুব, খুব খুশি’ এবং আজানের কিছু আরবি শব্দ ভুল উচ্চারণ করায় ক্ষমা চেয়েছেন। এদিকে ডাভিট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় সমালোচনার শিকার হয়েছেন। একইসঙ্গে তাকে ইসলামবিরোধী মন্তব্যও শুনতে হচ্ছে। তবে মুসলমানদের কাছ থেকে অনলাইনে শুভেচ্ছাও পাচ্ছেন খুব। ইমি খান নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেন, সালাম এবং ভালো কাজ চালিয়ে যান। আপনার এখন ১৭০ কোটি ভাইবোন রয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় ডাভিট লিখেন, আমাকে আজ উম্মাহ (মুসলিম জাতি)-র এই পাতায় স্বাগত জানাতে যেসব মুসলিম ভাইবোন দয়া প্রদর্শন করেছেন তাদের ধন্যবাদ। আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না এই দয়াশীলতা আমার কাছে কতটা অর্থবহ। আগে ও’কনর নামের পরিচিত এই গায়িকা ১৯৯২ সালেও শিরোনাম হন। একটি মার্কিন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে পোপ জন পল দ্বিতীয়ের একটি ছবি ছেঁড়ার কারণে ওইসময় আলোচনায় এসেছিলেন। পরে টাইম ম্যাগাজিনকে এক সাক্ষাৎকারে ডাভিট বলেছিলেন, ক্যাথলিক চার্চের শিশুর নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এ কাজ করেন।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ফরাসি একজন বিশপ ডাভিটকে পাদ্রিত্ব দেন। আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা জানায়, সেসময় ডাভিটকে মাদার বার্নাদেতে ম্যারি নামকরণ করা হয়। তবে ক্যাথলিক চার্চ এটিকে ‘উদ্ভট এবং অযৌক্তিক’ বর্ণনা করে ওই পাদ্রিত্ব বাতিল করে দেয়। ২০১১ সালে সানডে ইন্ডিপেন্ডেন্টে লেখা এক নিবন্ধে শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আবারও ক্যাথলিক চার্চের সমালোচনা করেন ডাভিট। তার লিখায় তিনি ভ্যাটিকানকে ‘শয়তানের বাসা’ বর্ণনা করে একটি ‘বিকল্প চার্চ’ তৈরির আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভ্যাটিকানে ‘মিথ্যুকরা খ্রিস্টকে হত্যা করছে’।

২০১৫ সালে চার সন্তানের জননী ডাভিট তার ফেসবুক পাতায় এক পোস্টে জানান, তার ছোট ছেলের অভিভাবকত্ব নিয়ে স্বামী আইরিশ সঙ্গীতকার ডোনাল লুনি সঙ্গে লড়াইয়ের চাপ সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ সেবন করেছেন। পরে পুলিশ জানায়, তারা ও’কনরকে খুঁজে পেয়েছেন এবং তিনি সুস্থ ও নিরাপদে আছেন।

ওই বছরই খবর বের হয় যে, ও’কনরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে একটি বাইক রাইডে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। তবে একদিন পরই তাকে খুঁজে পায় পুলিশ। গত বছর নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কান্নারত অবস্থার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ও’কনর। ওই ভিডিওতে দেখা যায় একটি মোটেলের রুমে কান্না করছেন ও’কনর। তার মানসিক স্বাস্থ্যের ইস্যুতে তার পরিবার তাকে ত্যাগ করেছে এমনটাও বিলাপ করতে শোনা যায় ওই ভিডিওতে।

সূত্র: সিএনএন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *