কাঁচামাল আমদানিতে কঠোর হোক ঔষধ প্রশাসন

কাঁচামাল আমদানিতে কঠোর হোক ঔষধ প্রশাসন

যদি গোড়ায় গলদ হয় তাহলে পুরো স্ট্রাকচারেই তো থেকে যাবে মল। ফাউন্ডেশনেও যদি ত্রুটি থাকে পুরো ভবন তো রানা প্লাজার মতো ধসে পড়বে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের জীবনরক্ষাকারী যে ঔষধ আমাদের কোম্পানীগুলো অসদ উপায়ে অনিরাপদ কাঁচামাল দিয়ে তৈরী করছে বা আমদানি করছে তা খুবই নিন্দনীয় ও ভয়ঙ্কর বিষয়। ভালোমানের কাঁচামালই (এপিআই) মানুষের জীবনরক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদনের কার্যকর উপাদান। কাজেই ওষুধের যথাযথ মান নিশ্চিতে নিরাপদ উৎস থেকে এপিআই কেনা অত্যন্ত জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ পশ্চিমা অনেক উন্নত দেশের কোম্পানিগুলোর উন্নতমানের এপিআই উৎপাদনের সুনাম রয়েছে। বিশ্বে মূলত সেগুলোই এপিআইয়ের নিরাপদ উৎস হিসেবে বিবেচিত। পাশাপাশি কিছু অনিরাপদ উৎসও বিদ্যমান। এর মধ্যে চীনের কিছু কোম্পানি অন্যতম।

বেশ কিছুদিন ধরে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের বিপজ্জনক উৎস হয়ে উঠছে দেশটি। সম্প্রতি চীনের তিনটি কোম্পানির বহু বিক্রীত কাঁচামালে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাব্য এজেন্ট শনাক্ত হওয়ায় অন্তত ২৩টি দেশে অসংখ্য ওষুধ বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। চীন ছাড়াও আরও কিছু দেশের কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ ও মানহীন কাঁচামাল উৎপাদন করে। নিম্নমানের কাঁচামাল উৎপাদন করায় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএস-এফডিএ) গত চার বছরে ২০টি কোম্পানিকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। অথচ দুঃখজনক, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ওষুধ কোম্পানি কাঁচামাল আমদানি করছে। সন্দেহ নেই, অনিরাপদ উৎস থেকে আমদানিকৃত এপিআই দ্বারা উৎপাদিত ওষুধের কাক্সিক্ষত মান বজায় রাখা অসম্ভব ব্যাপার। বড় কথা, সেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রাণঘাতী। সুতরাং বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেয়া কাম্য।

আমরা আশাবাদি, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু গণমাধ্যম সরব ভূমিকা পালন করেছে সেহেতু ঔষধ প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। অন্যথায় এ গরিব দেশের মানুষের মাথার উপর থেকে ভয়ের থাবা দূরীভূত হবে না।

বিষয়টি জেনে অবশ্যই আনন্দিত আমরা এই জন্য যে, এরই মধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর উল্লিখিত তিনটি চীনা কোম্পানি থেকে কেনা এপিআই দিয়ে প্রস্তুতকৃত বেশকিছু প্রচলিত ওষুধ সাতদিনের মধ্যে বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে দেশের সাতটি কোম্পানিকে নির্দেশ প্রদান করেছে। কোম্পানিগুলোর এখন আলোচ্য নির্দেশনার যথাযথ পরিপালনই কাম্য। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরকে কোন কোম্পানি কোত্থেকে এপিআই আমদানি করছে, কীভাবে ওষুধ তৈরি করছে, ওষুধের কাক্সিক্ষত মান বজায় থাকছে কিনা, সেগুলো কঠোরভাবে দেখভাল করতে হবে। নিয়মিত বিরতিতে সংস্থাটির তদারকি ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *