২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৮ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

কুরআন শরীফ কি আগুনে পুড়তে পারে?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডি মানুষকে বিভিন্ন রকমের বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একদিকে ব্যবসায়ীদের বেদনা, অপরদিকে চোরদের হাতসাফাই, আবার এদিকে এই ধনীব্যবসায়ীদের কাল্পনিক দুর্দশার গল্প ফেঁদে চলছে একদল ভিডিও নির্মাতার ভিউয়ের ব্যবসা।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনায় এই পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা একটি ‘অক্ষত’ আরবী গ্রন্থ, প্রাথমিকভাবে যেটাকে পবিত্র কুরআন শরীফ বলে অজ্ঞানতাবশতঃ উপস্থিত জনতা দাবি করেছিলেন।

এই প্রেক্ষিতে জনমনে প্রশ্ন, কুরআন শরীফ কী আগুনে পুড়ে না? আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফকে হিফাজতের যে ঘোষণা দিয়েছেন, এর অর্থই বা কী?

এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছে ভিন্নধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমি।’

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পাতায় লিখেছে :

প্রশ্ন :

কুর’আন শরিফ কি আগুনে পুড়তে পারে? অগ্নিকাণ্ডে কুর’আন পুরে গেলে কি ইসলামের দুর্বলতা প্রকাশ পায়? অগ্নিকাণ্ডে কুর’আন অক্ষত থাকা কি কোন অলৌকিক ব্যাপার?

উত্তর :

কুর’আন আগুনে পুড়ে যেতে পারে। বরং অন্যান্য জিনিস থেকে কুর’আন দ্রুততর পুড়তে সক্ষম। কারণ কুর’আন কাগজের তৈরি। আর কাগজের শীটগুলো খুবই পাতলা হয় এবং এর উভয় পাশেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে। যার ফলে এর ফাইবারগুলো দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে কাঠ, কাপড় ইত্যাদি বস্তুর চাইতে দ্রুততর ভষ্ম হয়ে যেতে পারে। কাজেই আগুনে কুর’আন পুড়তে পারেনা এই দাবি ভুল।

অগ্নিকাণ্ডে কুর’আন শরিফ পুড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এতে কুর’আনের অক্ষমতা কিংবা অবমাননা প্রকাশ পায় না। হযরত উসমান রা. পাঠকদেরকে একই পঠন প্রক্রিয়ায় সমবেত করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট একটি কপি বাদে বাকি শতশত কুর’আনের কপি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন*। তখন সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো।

যদি কুর’আন পুড়ে যাওয়ায় ইসলামের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যেতো তাহলে জামিউল কুর’আন খ্যাত এই খলিফাতুল মুসলিমীন সাবার সামনে কুর’আন পোড়াতেন না। আর কোর’আনের কপিগুলোও পুড়েও ছাই হয়ে যেতো না। সুতরাং অগ্নিকাণ্ডে কুর’আন পুরে গেলে ইসলামের দুর্বলতা প্রকাশ পায় এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

আর যদি যদি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় তাহলে সেটা কোনো অলৌকিক কিছু না। এবং এটা কুর’আনের কোনো মু’জেযাও হতে পারে না। কুর’আনের অলৌকিকতা হলো এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া সাহিত্য ও আলঙ্কারিক শক্তিতে বলিয়ান এক ঐশ্বী কিতাব*।

পুনশ্চ : সূরা হিযরের নয় নং আয়াতে যে ‘নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক’* বলা হয়েছে এর অর্থ এই নয় যে আগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া থেকে কিংবা বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া থেকে আল্লাহ একে সংরক্ষণ করবেন। ইমাম ত্ববারী বলেন, ‘কুর’আনের মধ্যে কোনো প্রকার মিথ্যার অনুপ্রবেশ ও এর কোনো বিধান বিকৃত হয়ে যাওয়া থেকে আল্লাহ একে হেফাযত করবেন’।*

উত্তর প্রদানে :

ফতোয়া টিম, ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমী

সূত্র : 

* ফাতহুল বারী, কিতাবু ফাযাইলিল কুর’আন

* তাফসিরুল কাশশাফ, সূরা ইসরা, আয়াত : ৮৮

* সূরা আল হিযর, আয়াত : ৯

* তাফসীরুত ত্ববারী। সূরা আল হিযর, আয়াত : ৯

 

ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমী সম্পর্কে জানতে দেখুন এখানে

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২৩ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com