পাথেয় ডেস্ক • ঋতুবৈচিত্র্যের পালাক্রমে চলছে শীত। এই শীত মৌসুমের শুরুতেই সন্দ্বীপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
এখন তাদের দম ফেলার সময় নেই। শীত মৌসুমের প্রতিদিন সকালে গাছিদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে দেখা যায়। বর্তমানে এই পেশার ওপর অনেক মানুষ নির্ভরশীল। তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এই খেজুর গাছের রসের ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এই সন্দ্বীপ থেকে। শীতে নানা রকম খাবার, ফুল-ফল, সবজি ও পিঠা পুলির আমেজ নিয়ে হাজির হয় শীতকাল। শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে অতিপ্রিয় খেজুরের রস।
স্থানীয়দের মতে এক সময় সন্দ্বীপে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার খানিক অংশ ভালো করে পরিষ্কার করার কাজ করতে হয়। এরপর পরিষ্কার করা সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় মাটির পাত্র দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়।
সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, শীত মৌসুমে এই খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। সে মোতাবেক ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মোটামোটি এপ্রিল মাস পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতি মধ্যে এই উপজেলার গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ অভিযানে মাঠে নেমেছেন বলে তিনি জানান।
সন্তোষপুর গ্রামের একজন গাছি ইবরাহিম। রস সংগ্রহের নানাদিক বিষয়ে তিনি জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই ৫ মাস আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।
ইবরাহিম আরো জানান, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যতœ সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় মাটির পাত্র বাঁধে রসের জন্য। আবার সকাল আনুমানিক ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে। কেউ কেউ এই রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে (কাঁচা রস) খাওয়ার জন্য বিক্রয় করে আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করার কাজ শুরু করেন।