গোমরাহদের সঙ্গে ঐক্য হয় না
মাওলানা আমিনুল ইসলাম :: একটা গ্রুপ সব সময় ঐক্যের সাউন্ড দেয়। সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি, আলেমগণ হক বললে ওরা বলে ওঠে, কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না। আসুন! ঐক্য গড়ে তুলি! বর্তমান কঠিন সময় পার করছি আমরা। এ সময়ে ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই।
রাস্তা- ঘাটে, হাটে- বাজারে, সেমিনার, ওয়াজ মাহফিল বিভিন্ন জায়গায় ওনাদের স্লোগান, ঐক্য চাই! ঐক্য চাই!
ওনারা আলেমদের সবচেয়ে বেশী টার্গেট করে বলেন, হুজুর! আর এদিক- সেদিক করবেন না, ঐক্য গড়ে তুলুন! মিলে মিশে চলুন।
বন্ধু, আলেমগণ ঐক্যের বিরুদ্ধে নয়। আলেম- উলামা সকলেই ঐক্য চান। সকলের সাথে মিলে মিশে চলতে চান। কিন্তু কথা আছে। ঐক্যের স্লোগান শুধু মুখে মুখে জপলে হবে না। ঐক্য গড়ে তোলার মত কাজ করতে হবে। পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তারপরে ঐক্য সম্ভব। এছাড়া ঐক্যের স্বপ্ন দেখা বোকামী।
যারা মওদুদী মতবাদের অনুসারী। ভ্রান্ত মওদুদীর আকিদা বিশ্বাসকে আজো আঁকড়ে ধরে আছেন। বহুবার আলেম সমাজ তাদেরকে সতর্ক করেছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজঅবধি তারা সেই ভ্রান্ত মতবাদের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছে। প্রাণ যাবে, কিন্তু মওদুদীর সেই বিতর্কিত গোমরাহী মতবাদ ত্যাগ করবে না।
কতবার যে ওলামায়ে কেরাম মওদুদী সাহেবের অসারতা জাতির সামনে তুলে ধরেছে, আবার তার অনুসারীদের সতর্ক করেছে, তার হিসাব নেই। তারপরেও সেই মওদুদীবাদীরা তাদের নীতিতে অনড়। সেই ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাস ধারণ করে আছে।
এভাবে এক মুখে ঐক্য চাই, আর অন্য দিকে মওদুদী সাহেবের মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। ওনারা কোন দিন এই কথা ঘোষণা দিতে পারলেন না, আমরা মওদুদীর অনুসারী নই। অন্তত বৃহত্তর স্বার্থে এটা করা উচিত ছিল তাদের।
যেভাবে ঐক্যের স্লোগান তুলে মুখে ফেনা উঠাচ্ছেন তারা। সত্যি সত্যি যদি ঐক্যের দাবি মনে প্রাণে থাকত, তাহলে অবশ্যই মওদুদী সাহেবের চিন্তা- চেতনার ধারক- বাহক না হয়ে, হক- হক্কানিয়্যাত প্রতিষ্ঠার চিন্তা ভাবনা নিয়ে সামনে বাড়তেন।
কিন্তু কি হবে? যতই আলেম সমাজ তাদের চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়, ওরা যেন তখন চোখ কান বন্ধ করে বসে থাকেন। কোন কথা আমলে নেন না।
এর দ্বারা বোঝা যায়, ওদের ঐক্য শুধু মুখে মুখে। মনে প্রাণে আসলেই তারা চান না। স্লোগান শুধু ঐক্যের। কিন্তু কাজে কর্মে অনৈক্য প্রকাশ পাচ্ছে।
মানে পাবলিকের সামনে আইওয়াশ। লোক দেখানো। কিন্তু জটলা ওনার বেঁধে রাখছেন।
বর্তমানে এক বক্তা আবিষ্কার হয়েছে। তিনি নাকি ঐ ওনাদের অনুসারী। কথা বার্তা ভালই বলেন। ওয়াজের ময়দানে ভালই জমিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কি হবে? ঐ যে এক ডোজ আগে পান করেছেন। এখন তো ঘুরে ফিরে সেই ঢেঁকুর তুলছেন।
একদম মওদুদীর চরিত্র ফুটে উঠেছে সেই বক্তার কণ্ঠে। কথায় কাজে যেন সেই মওদুদীর ফটোকপি। মওদুদী সাহেবকে যেমন ভুল ধরিয়ে দিলে ভুল শিকার করত না, বরং তার ভুলকে সঠিক বলে চালিয়ে দিতেন। ঠিক, বর্তমান সেই বক্তার স্টাইল একই ধরনের। ভুলকে ভুল বলে শিকার করতে রাজি নয়।
কালকে এক বয়ান শুনলাম, অহমিকার সাথে জওয়াব দিলেন, প্রজেক্টর সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন “”আকল থাকতে হবে””। তাহলে আকল কি শুধু তার একার। এদেশের আলেম – উলামার কারো কি আকল নেই? পর্দার বিষয়ে আলেমগণ তাকে ভুল ধরায়ে দিলেন, আজো তার বক্তৃতার ওপর অটল। কোন পরিবর্তন নেই।
এরকম বারবার ভুল করে যাচ্ছেন। আবার তার বক্তব্য থেকে ফিরে আসছে না। অহংকারের সাথে নিজ বক্তৃতার ওপর অটল- অবিচল। এরকম সব মনগড়া কাজ কারবার ঐ ঐক্যের স্লোগানধারীদের। মুখে মুখে ঐক্য। কিন্তু কাজ কর্মে অনৈক্য।
আলেমগণ ঐক্য চান। তবে ফ্রেশ মানুষের দের সাথে। কারো ক্ষুধা লাগলে অবশ্যই তার খেতে হবে। তাই বলে বিষ মিশিয়ে খাবার খাবে না কখনো। ক্ষুধা যতই হোক, খাবার খেতে হবে ফ্রেশ, নির্ভেজাল।
ঐক্য চাই, তবে নীতি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। গোমরাহ শ্রেণীর মানুষের সাথে ঐক্য নয়। কুরআন হাদীস অপব্যাখ্যা কারীদের সাথে ঐক্য কোনদিন হবে না।
এজন্য বন্ধু, ফিরে আসতে হবে আপনাদের। ভ্রান্ত চিন্তা চেতনাকে ছেড়ে দিয়ে সহী আকিদা বিশ্বাস ধারন করা জরুরি। কুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যা ছেড়ে দেওয়া চাই। ভুল করে সেটার উপর আবার অটল থাকা নয়। মানুষ মাত্র ভুল আছে। তবে সেই ভুলকে শোধরিয়ে নেওয়া জরুরি। হকের উপর অটল- অবিচল থাকা চাই সকলের। তাহলে ঐক্য সম্ভব। নচেৎ শুধু বুলি আউড়িয়ে কোন লাভ হবেনা কোনদিন।
আলেম সমাজ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। সহী জামাতের সাথে তাদের কোন দুশমনি নেই। যারা হক- হক্কানিয়্যাত প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, তাদের সাথেই আলেম সমাজ।
মনে রাখতে হবে, আলেমদের সাথে কারো ব্যক্তিগত দুশমনি নয়। কারো জমিজমা নিয়ে মারামারি নেই। আলেমগণ হকের অনুসারী তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের দৃষ্টিভঙ্গি বহনকারী জামাত।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে সহী বুঝ দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক