চকলেট | তামীম আবদুল্লাহবদুল্লাহ
-মা! এখন কেন জানি তোমার সাথে কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছে না।
-এখন তো তোর ইচ্ছেই করবে না। তোর তো এখন অনেক কাজ। তুই তো কাজে এত ব্যস্ত থাকিস যে ঘুম ভাঙে ১১টায়।
-মা তুমি এখন কথা বাড়িয়ো না। যাও, তোমার কাজে যাও।
ঝগড়া করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রাফি। শুভ্র সুন্দর পুরো সকালটাই মাটি হয়ে গেল রাফির। তার ধারণা দিনের শুরুটা ভালো হলে সারাদিন ভালে যায়। দিনের শুরুটা ভালো হওয়া প্রয়োজন মনে করে রাফি। সে মতে রাফির কাছে আজকের দিনটা ভালো না। তাই মন খারাপ করে পাড়ার মাঠে একা একা বসে আছে। অনেক সময় পার হয়ে যাবার পর মনে হলো, তার মায়ের সাথে রাগারাগি করা ঠিক হয়নি। শুধু শুধু চেচাঁমেচি করেছে সে।
রাফি মনস্থির করলো, বাসায় গিয়ে তার মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবে। সে জন্য রাফি বাসার পথে হাঁটা শুরু করলো।
রাগারাগির কারণে সকালে নাস্তাও করেনি। নাস্তা না করায় তার পেটে ভীষণ ক্ষুধাটাও অনুভূত হচ্ছে। এই জন্য দোকান খুঁজতে লাগলো। সামনে একটা দোকান দেখে সেখানে ঢুকে পড়লো রাফি। কি কিনবে এ নিয়ে রাফি বেশ চিন্তিত! কারণ, দোকানের মধ্যে সব পণ্য চোখের সামনে মেলে ধরলে কোনটা রেখে কোনটা নেবে তার দিশা পায় না। সব কিছুই দেখতে লাগলো।
হঠাৎ তার পাশে ছোট্ট একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো। রাফি ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। যেন অদ্ভুত এক মায়া তাকে আকড়ে ধরেছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দোকানের খাবারের দিকে। কি মিষ্টি, মায়াবী, নিষ্পাপ চেহারা! গায়ের জামা কেমন ঘোলাটে হয়ে গেছে। জামাটা অনেকদিন ধরে ধোয়া হয় না এ জন্য এমন দেখাচ্ছে। দোকানদার সেই মেয়েটাকে একটা প্যাকেটে কিছু সদাই দিলো। মেয়েটা তার হাতের মুঠোয় গুজিয়ে রাখা টাকাটা দোকানদারকে দিলো। তখন দোকানদার তাকে দুই টাকার একটা নোট ফিরিয়ে দিলো। মেয়েটা দুই টাকার নোটটা হাতে নিয়ে বললো, আমাকে ওই চকলেটটা দেন।
দোকানদার বললো, এইটার দাম তো পাঁচ টাকা।
তখন সে আরেকটা চকলেটের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো, তাইলে এই চকলেটটা দেন।
তখন দোকানদার আবার বললো, এইটার দামও পাঁচ টাকা।
মেয়েটার মুখে একটা হতাশার ছাপ পড়লো। রাফি সাথে সাথে পকেটে হাত দিয়ে দেখলো তার পকেটে অতিরিক্ত কিছু টাকা আছে। রাফি মনে মনে চিন্তা করলো, সে এই মেয়েটাকে দশ টাকা দিবে, বলবে, এই নাও আপুমণি দশ টাকা। এই টাকা দিয়ে তুমি কয়েকটা চকলেট কিনতে পারবে। কিন্তু রাফি হাতে টাকা নিয়ে দেখে মেয়েটা তার পাশে নেই। পাশে কয়েকটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও দেখা যাচ্ছে না মেয়েটাকে।
তখন রাফি এদিক ওদিক তাকিয়ে মেয়েটিকে খুঁজতে লাগলো, হঠাৎ দেখলো মেয়েটি দৌড়ে চলে যাচ্ছে। রাফি সাথে সাথে মেয়েটিকে ডাকার জন্য দোকান থেকে বের হলো। তখন একটা গাড়ি ও রিকশা পুরো রাস্তাটা আটকে দিলো। অনেকবার চেষ্টা করেও বের হতে পারলো না। তারপর রাফি লাফ দিয়ে গাড়িটাকে ডিঙিয়ে সেখান থেকে সরে এলো। রাফি দৌড়ে রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালো। ততক্ষণে মেয়েটা দৌড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। রাফি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো আর সেই ছোট্ট মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলো। তার অনেক ইচ্ছা ছিল যে ছোট্ট মেয়েটার মুখে তৃপ্তির হাসির ছাপ দেখবে কিন্তু সে তা পারেনি।
এখনও রাফি প্রায় সময় রাস্তার মোড়ে আর দোকানটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে আর চিন্তা করে, সেই ছোট্ট মেয়েটা আবার আসলে বলবে, আপুমণি! এই নাও দশ টাকা। এই টাকা দিয়ে তুমি কয়েকটা চকলেট কিনতে পারবে।