আদালত প্রতিবেদক ● জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবালের স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে ছয় মাসের জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ চার আসামির দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাঁদের জামিন দেন।
আদালতের আজকের এই আদেশের ফলে ইকবালের স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ের কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ওই চারজনকে ৮ মার্চ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আতাউর রহমান।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন জানান, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় হয় ২০০৮ সালে। রায়ে তাঁদের সাজা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ওই চারজন বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। ৮ মার্চ আদালত শুনানি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে চার আসামির করা আপিল বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিদের ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন।
এইচ বি এম ইকবাল বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তাঁর ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল একই ব্যাংকের একজন পরিচালক। আরেক ছেলে মঈন ইকবাল ও মেয়ে নওরীন ইকবালও একসময় ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৭ মে এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম ও তাঁদের তিন সন্তানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। আদালত ২০০৮ সালের ১১ মার্চ এইচ বি এম ইকবালকে পৃথক দুটি ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের তিন বছর করে কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
কয়েক দফা রিট আবেদন শেষে এইচ বি এম ইকবাল নিজে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ২০১০ সালে আত্মসমর্পণ করেন। তবে ২০১১ সালে হাইকোর্ট থেকে খালাস পান। খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেও দুদক পরে এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা না চালানোর (নট টু প্রেস) সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৫ সালে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, এইচ বি এম ইকবালের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা তখন আত্মসমর্পণ করেননি। তবে হাইকোর্ট তাঁদের সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। স্থগিতাদেশের মেয়াদও শেষ হয়ে যায় ২০১০ সালের নভেম্বরে। এরপর ছয় বছর তাঁরা বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ ছিলেন। এ সময় সাজাপ্রাপ্ত হয়েও বেআইনিভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক হন মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল।
বিশেষ আদালতের রায় নতুন করে স্থগিতাদেশ চাইলে গত বছরের ১৮ অক্টোবর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. সেলিমের দ্বৈত বেঞ্চ আরও ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করেন। পরের মাস, অর্থাৎ ১৬ নভেম্বর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালত ১৮ অক্টোবরের স্থগিতাদেশটি স্থগিত করে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি উচ্চ আদালত ২০০৮ সালে হওয়া নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে আসামিদের আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।
এদিকে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল কীভাবে পরিচালক—গত মাসে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদের কাছে তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫ (৬) ধারা অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না। আইন অনুসরণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইমরান ইকবালকে অপসারণ করার কথা।
patheo24/mr