পাথেয় রিপোর্ট : আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনালেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে হাইজ্যাক করেছে। প্রচারবিমুখ আলেমউলামাগণের ইতিহাস কখনোই তুলে ধরা হয়নি।
দাড়িটুপি ইসলামের একটি বিশেষ শিয়ার তথা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ শিয়ারকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে তারা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশের আলেমগণও কাজ করেছেন। জনমত তৈরি করেছেন।
সোমবার রাজধানীর জামিআ ইকরা বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম আয়োজতি মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির আলোচনায় আল্লামা মাসঊদ এসব কথা বলেন।
সভাপতিত্ব করেন জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ। মুক্তিযুদ্ধের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে গল্প করেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। উপস্থিত ছিলেন আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম এর কেন্দ্রীয় কমিটির অাহ্বায়ক মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন। উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা হুসাইনুল বান্না, আরও উপস্থিত ছিলেন আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আইনজীবী রাশিদুল আলম মোল্যা, মাওলানা মাসউদুল কাদির, মাওলানা আবু বকর জাবের, মাওলানা শেখ নাঈমুল ইসলাম, মাওলানা তানজিল আমির, খালিদ হোসাইন, মাহমুদুল হাসান জুয়েল, মুসাফির আব্দুস সালামসহ আরও অনেকে।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কখনোই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয় নয়, বাংলাদেশের আলেম সমাজ মুক্তিযুদ্ধবিরোধি ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের সাথে দাড়ি-টুপিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার দ্বারা একশ্রেণী সাম্প্রদায়িক আচরণ করে আসছে বরং অনেক মুক্তিযোদ্ধারই দাড়ি ছিল, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে যাওয়ার আগে নামাজ পড়ে যেতেন। আল্লাহর কাছে রোনাজারী করে যেতেন। শেষ বিদায় নিয়ে অপারেশনে আল্লাহ আল্লাহ রব তুলে ছুটে যেতেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আলেম সমাজের অবদানের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ইতিহাস কখনো নিরপেক্ষ হয় না, যিনি ইতিহাস রচনা করেন তিনি তার নিজের আদর্শিক জায়গা থেকেই তা রচনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বামপন্থিরা বেশি কাজ করায় তাঁরা তাদের আদর্শ, চিন্তা চেতনার আলোকে ইতিহাস রচনা করেছেন, আজ ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগের কথা প্রচার করা হয়, মাস্টারদা সূর্য সেনের মতো আলোচনা হলেও আমাদের তিতুমীল ও হাজী শরীয়তুল্লাহর আলোচনা নেই।
আলেম সমাজ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ না করায় তাঁরা আজ উপেক্ষিত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আলেম সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হল তাঁরা এই ইতিহাস বিকৃতির প্রতিরোধ করতে সক্ষম হননি এবং নিজেদের অবদানকে জাতীর সামনে তুলে ধরতে পারেন নি। স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরে হলেও তরুণ আলেম প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা নিয়ে এগিয়ে আসায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন এই তরুণ আলেম প্রজন্ম আগামীতে সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে আলেম সমাজের অবদানকে জাতির সামনে তুলে ধরবে এবং একটি উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখবে।
গ্রন্থনা : শেখ নাঈমুল ইসলাম সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির