২৭শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৪ঠা রজব, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দুনিয়ার সব মানুষ জান্নাতি হয়ে যাক এটাই আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয় বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) হাজীপাড়া ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে শবগুজারীর বয়ানে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এ কথা জনান।
‘রূহের জগতে থাকতে মানুষ একমাত্র আল্লাহকে প্রভু হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, আলমে আরওয়াহে থাকতে মানুষের মাঝে আল্লাহ তাআলার পরিচয় ছিল। সবার মাঝেই আল্লাহর মারিফাত ছিল। তাই যখন আল্লাহ তাআলা এই বলে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আলাসতু বিরাব্বিকুম’ (আমি কি তোমাদের প্রভু নই?)—তখন কেউ এ কথা অস্বীকার করতে পারে নাই। সবাই এক বাক্যে জওয়াব দিয়েছিলো ‘বালা’— ‘অবশ্যই আপনি আমাদের প্রভু’। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ তাআলার মারিফাত-অভিজ্ঞান মানুষের কাছে আগে থেকেই ছিলো।
দুনিয়াতে এসে মানুষের আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই আধ্যাত্মিক রাহবার বলেন, ‘আলমে আরওয়া’ বা রূহের জগতে মানুষের সামনে এক আল্লাহ ছাড়া কিছু ছিল না। আসমান ছিল না, জমিন ছিল না। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত ছিল না। আত্মীয়-স্বজন ছিল না। তার সামনে একমাত্র আল্লাহই ছিলেন। কিন্তু দুনিয়াতে আসার পরে ‘চিজ ও আসবাবের’ কারণে আল্লাহর পরিচয় তার হৃদয়ে আচ্ছাদিত হতে থাকে। মানুষ যত বড় হতে থাকে, আল্লাহর থেকে তার দূরত্ব এবং শিরকের বিষয়গুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে। আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাত বা আল্লাহর এককত্বে যে বিশ্বাস ছিলো, তা তার থেকে দূর হতে থাকে। এভাবে এক পর্যায়ে মানুষ আল্লাহ তাআলাকে সম্পূর্ণ ভুলে যায়।
দুনিয়াতে আম্বিয়ায়ে কেরামের আগমনের প্রকৃত কারণ তুলে ধরে শাইখুল ইসলাম বলেন, মানুষ দুনিয়াতে গিয়ে আল্লাহ তাআলাকে ভুলে যাবে এটা আল্লাহ তাআলার জানতেন। কোনো মানুষ জাহান্নামি হোক এটা আল্লাহ তাআলার কাছে পছন্দনীয় নয়। বরং সবাই যেন জান্নাতি হয় এটাই আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি প্রিয়। তাই আল্লাহ তাআলা মানুষের উপর মেহেরবানী করে আল্লাহ যে আছেন, মানুষকে এটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইসিমুস সালামকে পাঠিয়েছেন।
যিকিরের মূল অর্থ জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, যিকির মানে কী? আলমে আরওয়াহে যে অবস্থায় যে স্বীকৃতি দিয়ে এসেছি তাতে ফেরত যাওয়া। তুমি যেটা দেখছো এটার কোনো হাকীকত নাই। তুমি যে চন্দ্রকে দেখছো এটার কোনো হাকীকত নাই। দিন হলে সেটা দেখা যাবে না। তুমি যে সূর্য দেখছো সূর্যের কোনো হাকীকত নাই। কারণ রাত্র হলেই সূর্যকে আর দেখা যাবে না। যে আল্লাহকে আমরা ‘আলমে আরওয়াহ’-এ স্বীকার করেছি তাঁর কথা স্মরণ করা। এটাকেই বলা হয় আল্লাহর যিকির করা বা আল্লাহকে স্মরণ করা।
তিনি আরও বলেন, স্মরণ করা মানে হলো আমি আগে জানতাম এখন আর জানি না। যে জিনিসটা একদম জানি না সেটাকে স্মরণ করা বলে না। একথা নয় আল্লাহকে আমি জানতাম না। আল্লাহ সম্পর্কে আমি একদম বেমালুম অজানা ছিলাম এমনটা নয়। আল্লাহকে আমি জানতাম। কিন্তু দুনিয়ায় এসে মাল-সামান, চিজ ও আসবাব দেখে আল্লাহ তাআলাকে ভুলে গিয়েছি। আম্বিয়ায়ে কেরামের আসার উদ্দেশ্য এটাই, মানুষ যেন আল্লাহকে স্মরণ করে। কোন হিসাবে স্মরণ করবে? যে হিসাবে সে ‘আলমে আরওয়াহে’ স্বীকার করেছিলো।
গ্রন্থনাঃ আব্দুর রহমান রাশেদ