পাথরের মত জমে থেকে ইলম অর্জন করো : আল্লামা মাসঊদ
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জামিআ ইকরা বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় পাথরের মত জমে থেকে ইলম অর্জন করা কথা বলেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
তিনি বলেন, পাথরের উপর দিয়ে বন্যার পানি কিংবা সাগরের ঢেউ গেলেও পাথর যেমন নড়াচড়ার করে না, তার নির্দিষ্ট জায়গা জমে থাকে, সেভাবে মাদরাসায় মধ্যেই তোমরা জমে থাকো। পড়াশোনার মনযোগী হও। মাদরাসায় বাহিরে যতই আলোচনা, সমালোচনা, অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, গুম ও খুন হোক না কেন, তুমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। তোমার কাজ মাদরাসায় জমে থাকা। ইলম অর্জন করা।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জামিআ ইকরা মিলনায়তনে আয়োজিত ইসলাহী বয়ানে মাওলানা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ.-এর এই খলিফা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এসব বলেন।
ইসলাম সমাজবান্ধব ধর্ম। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতার কথা বলে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, সামাজিক যত সৌন্দর্য আছে সবই ইসলামে নিহিত। আমাদের পেয়ারে নবীজী [সা.] সামাজিকতা শিখিয়েছেন, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সৌভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, নবুয়ত জীবনের শুরুতে নবীজী [সা.] তার সামাজে, তার পরিবেশে অনেক বেশি অপমানিত, লাঞ্ছিত, অপদস্থ হয়েছেন। দিনের দিন সমাজের বসাবসরত মানুষের দেয়া কষ্ট সহ্য করেছেন। তবুও তিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাননি। সমাজের মানুষ থেকে দূরে সরে যাননি। বরং সমাজের মানুষের কল্যাণকামীতায় নিজেকে উজার করে দিয়েছেন।
গুণে ধরা, পচন ধরা নিষ্ঠুর সমাজ আমাদের পরিশুদ্ধ করতে হবে জানিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, আমাদের সমাজে পচন ধরে গেছে। সমাজের সবাই যেন ‘আদা জল খেয়ে’ নেমেছে, কিভাবে সমাজের পরিবেশ নষ্ট করা যায়, নিজেও ধ্বংস করা যায়। আমাদেরকে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, স্রোতের উল্টো পথে চলে সমাজকে শুদ্ধ করতে হবে। নবীজী [সা.] সমাজের পরিবেশকে যে উচ্চতায় রেখে গেছেন, সেই উচ্চতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
জামিআ ইকরা সুস্থ সমৃদ্ধ চেতনা লালনের শিক্ষা দেয়া জানিয়ে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, জামিআ ইকরায় শুধু পড়ালেখা শিখানো হয় না, বরং তোমাকে তোমার চেতনায় দিকে আহ্বান করবে। সুস্থ সমৃদ্ধ চেতনা লালনের শিক্ষা দেবে। আর এই চেতনা লালন করতে হলে নিজেকে আকাবির-আসলাফ ও দেওবন্দি উলামায়ে কেরামের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। শুদ্ধ চেতনা তাদের কাছ থেকেই নিতে হবে, গ্রহণ করতে হবে, শিখতে হবে।
তিনি বলেন, মাদরাসায় পাথরের মত জমে থেকে, পড়ালেখার পশাপাশি শুদ্ধ চেতনা লালন করে, সামাজে প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, স্রোতের উল্টো পথে চলে, স্রোতকে পাল্টানোর চেষ্টা তোমাদের করতে হবে।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, হেফজখানাসহ কওমি মাদরাসা খোলার জন্য যেসব উলামায়ে কেরাম চেষ্টা করেছেন এবং সরকারে এই কথা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ‘পবিত্র কুরআন ও হাদীসের সুর সামাজে শান্তি নিয়ে আসবে’- তাদের সবার শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। সেই সাথে কওমি মাদরাসা সকল ধরনের শিক্ষাকর্যক্রম চালু করে দেয়ায় সরকারেরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
করোনাভাইরাসের মহামারির এই সময়ে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় অবস্থান করার আহ্বান জানান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
ইসলাহী বয়ানে আরও উপস্থিত ছিলেন জামিআর রঈস ও সার্কিট হাউজ মসজিদের খতীব মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার মহাসচিব ও জামিআর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, মুফতী ফয়জুল্লাহ আমান কাসেমী, মুফতী সাইফুল ইসলাম, মুফতী হামীদুর রহমান, মুফতী মুহাম্মদুল্লাহ ইয়াহইয়া, মুফতী আমিনুর রহমান কাসেমী, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মুফতী রিয়াজুল ইসলাম, মাওলানা আশিকুর রহমান, মাওলানা ইসমাইল হুসাইন, মাওলানা আবু সালেহ প্রমুখ।