পা ফাটা রোধ থেকে বাঁচতে করণীয় কী?

পা ফাটা রোধ থেকে বাঁচতে করণীয় কী?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাতাসে হিমের ছোঁয়া। রাতে মৃদু কুয়াশা। একটু আগেই এসে গেছে শীত। গ্রামে এখন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চরাচর। রাজধানীতেও শুরু হয়েছে পৌষের আমেজ। শেষ রাতে কাঁথা গায়ে দিতে হচ্ছে। শীতের এই সময়টা খুবই শুষ্ক। এই সময় শুরু হয় পা ফাটার সমস্যা।

শীতকাল মানেই পা ফাটার সমস্যা শুরু। কেবল ভুক্তভোগীই জানেন কি অসহ্য যন্ত্রণা হয়ে থাকে ফাটা পায়ে। অনেকেই অনেক ধরনের ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন এই পা ফাটা নিরাময় করতে। কিন্তু কেমিকেল সমৃদ্ধ ক্রিমে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা ঠিক হলেও পরবর্তীতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ সমস্যা শুরু হয় আবার। কিন্তু খুব সহজেই ঘরে বসে আপনি প্রতিরোধ করতে পারেন এই যন্ত্রণাদায়ক পা ফাটা রোগটি। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই উপায়গুলো।

চালের গুঁড়ার ব্যবহার : একমুঠো চালের গুঁড়ো নিয়ে এতে ২/৩ টেবিল চামচ মধু, ২ তেবিল চামচ ভিনেগার, ১ তেবিল চামচ অলিভ অয়েল/ আলমণ্ড অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুণ। প্রথমে ১০ মিনিট গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নিয়ে এই পেস্টটি দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভালো করে স্ক্রাব করে নিন। এতে করে পায়ের মরা চামড়া দূর হবে এবং শুষ্ক ভাবও চলে যাবে।

নিম পাতার ব্যবহার : ১০/১৫ টি নিম পাতা নিয়ে ধুয়ে ভালো করে বেটে নিন। এতে ৩ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে নিন পুরু করে। ৩০ মিনিট রেখে গরম পানি দিয়ে পা ভালো করে ধুয়ে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন। নিমের অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান দ্রুত পা ফাটা রোধ করবে।

মধুর ব্যবহার : মধুর ময়েসচারাইজিং এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান পা ফাটা ও শুষ্ক ত্বক দুটোই দূর করতে সাহায্য করে। অর্ধেক বালতি পানিতে ১ কাপ পরিমানে মধু ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে এই পানিতে ১৫-২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর একটি স্ক্রাবার দিয়ে আলতো করে পা ঘষে নিন।

গোলাপজল ও গ্লিসারিনের ব্যবহার : গোলাপজলে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৩, সি, ডি ও ই, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা পা ফাটা দূর করে। এবং গ্লিসারিন ত্বককে নরম ও কোমল করতে সহায়তা করে। সমান পরিমাণ গোলাপজল এবং গ্লিসারিন মিশিয়ে নিয়ে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ের গোড়ালি ও পাতায় ম্যাসেজ করুণ।

কলার ব্যবহার : সব চাইতে সহজ পদ্ধতিটি হচ্ছে কলার ব্যবহার। একটি পাকা কলা নিয়ে তা ভালো করে পিষে নিন। পা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে এই পিষে নেয়া কলাটি পায়ের ওপর লাগান। ১০-১৫ মিনিট পড়ে গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ঠাণ্ডা পানিতে পা খানিকক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন।

পা ফাটা রোধ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের চর্ম বিভাগের চিকিৎসক মো. মনিরুজ্জামান খান লিখেছেন-

সমস্যা যাদের বেশি : শীতকালে যেকোনো মানুষেরই পা ফাটে, কিন্তু কারও কারও এই সমস্যা খুব বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন : যাদের থাইরয়েডে সমস্যা আছে তাদের এমনিতেই ত্বক খুব শুষ্ক থাকে, একই কথা ডায়াবেটিসের রোগীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। ডায়াবেটিসে স্নায়ুজনিত সমস্যায় পায়ের আর্দ্রতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনুভূতিতেও সমস্যা দেখা দেয়। তাই অনেক সময় পায়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়ে ঘা বা গ্যাংগ্রিন পর্যন্ত হতে পারে। যাদের সোরিয়াসিস, একজিমা বা কোনো চর্মরোগ আছে তাদের পায়ে সমস্যা বেশি হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের পা ফাটার সমস্যা বেশি।

কেন পা ফাটে

১. পুরো শরীরের মধ্যে পা ও এর তলাটাই সবচেয়ে শুষ্ক। কেননা দেহের অন্যত্র ত্বকের মাঝে তৈলগ্রন্থি থাকলেও পায়ের তালুতে তা নেই। কেবল ঘর্মগ্রন্থি আছে। ঠান্ডার দিনে ঘামও তেমন হয় না বলে পায়ের তলার আর্দ্রতা সহজে বিনষ্ট হয়। ফলে পা শুষ্ক হয়ে পড়ে ও ত্বক ফেটে যায়।

২. পা যখন ফাটে, তখন ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে, চুলকাতে পারে। এমনকি পায়ের ত্বক খোসার মতো উঠে গিয়ে ঝরে পড়তে পারে। কখনো রক্তাক্ত হতে পারে, ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।

চার পরামর্শ

১: খুব ঠান্ডা আবহাওয়ায় পা মোজা দিয়ে ঢেকে রাখুন।

২: প্রতিদিন গোসল বা অজুর সময় পা ভেজানোর পর একটা শুকনো তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিন। গোড়ালি ও তালুতে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন মাখুন।

৩: সপ্তাহে এক দিন পায়ের বিশেষ যত্ন নিন। গামলায় লেবুর রসমিশ্রিত হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে পা ঘষে মৃত কোষ ফেলে দিন। লেবুর রসে যে অ্যাসিটিক অ্যাসিড আছে তা মৃত কোষ ঝরতে সাহায্য করবে। তারপর পা মুছে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন লাগিয়ে নিন।

৪: জটিলতা বেশি হলে বা সংক্রমণ হয়েছে মনে হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *