পৈতৃক পয়গা‌ম

পৈতৃক পয়গা‌ম

আবু সালেহ মোহা‌ম্মদ জাকারিয়া-এর ৩টি কবিতা

পৈতৃক পয়গা‌ম

আমি তোমার সব হবো না
বিকেলবেলায় আকাশ ঘুড়ির
ছোট্ট একটু লেজ হবো।

আমি তোমার সুখ হবো না
সবাই যখন যত্নে-ভরা দুঃখ দেবে
আড়াল থেকে একটুখানি ধৈর্য হবো।

আমি তোমার ঠাঁই হবো না
সবাই যখন পুড়বে তোমায়
একটু শীতল পরশ হবো।

আমি তোমার কাঁধ হবো না
সবাই যখন ছাড়বে তোমায়
একটু ধরার হাত হবো।

আমি তোমার ঢাল হবো না
সব দিকেতে আটকে গেলে
একটু বাঁচার পথ হবো।

তোমার নায়ের পাল হবো না
মধ্য পথে, হঠাৎ কোথাও থেমে গেলে
তীরে ভেড়ার ক্ষীণজীবী বল হবো।

আমি তোমার সব হবো না কভু
আড়াল থেকে একটু শুধুই পাশে রবো।

কবর

কবর বলতে—
খবর না রাখা, শব বাহি এক ত্যক্ত ভূমি
পড়ে থাকে যেথা বাক-রুদ্ধ মৃতদের দল,
সংসারী জেল শেষে, পাড়ি দেয় যারা পরলোকে
অদামি দেহ তাদের, বুঝে নেয় যে মাটি-ঘর!
মানুষ তারে এক নামে চেনে কবর।

কবর বলতে—
বুকের পরে মাটি ঠেসে, ফেলে আসা একলা ঘর
ভুলে যাবার দায় এড়াতে, যাকে করো চির পর,
ছায়া রূপে, পথ হাঁটার আস্থা বিনাশি কেহ
ভূতল করে যেথা প্রিয়দের আস্ত মরদেহ!
লোকে তারে এক নামে জানে কবর।
কবর বলতে—
বাঁ পাশের বুকে, পোষ্য লোভের দাফন-ঘর
না ফেরার চুক্তিতে কলম ধরে যেথা মৃত-দল,
প্রয়াণ টানে, ঘর ছেড়েছিল যারা ভোরে
এদেরও ফিরতে দেয় না যে মাটির ছোট্ট বাড়ি!
মানুষ তারে এক নামে চেনে কবর।

লাশের মৃত্যু

‌একটি স্বকীয় মৃত্যু মেনে নেবে তাই—
পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছে শত কোটি লোক
নিদ্রাহীন কালো দাগি আঁখি, হারিয়েছে সুখ
গলদেশে ভাঁজ পড়ে, চেপে ধরেছে নীতি
জেগে আছে পুরো রাত, দেহ ভরা ভীতি।

একটি নিজস্ব মৃত্যু-প্রতীক্ষায়—
মৃত্যু-প্রার্থী সব করে গুনছে চাহায়াতের দিন,
তসবি-গুটিতে হিসেব, সুর ধরা অবসান বিন
ঘড়ি-কাঁটায় দৃষ্টি ফেলে, ব্যথা গিলে খাচ্ছে মুখ
চোখের আড়ালে শতো বুক পুষে যাচ্ছে দুখ।

একটি জীবিত লাশের মৃত্যু হবে বলে—
যত্নে যত্নে বেড়ে উঠেছে প্রস্থে মস্ত বাঁশ-ঝাড়
কাফনের থান নিয়ে, দোকানি ভুলেছে বার
বৃদ্ধরা ঘর ছেড়ে, ঠাঁই খুঁজে ঈশ্বরের দ্বারে
ক্ষমা দিও রব আমায়! ডুবেছি ভুল ভারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *