বঙ্গভবনের দীর্ঘতম বাসিদা রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কোথায় থাকবেন?

বঙ্গভবনের দীর্ঘতম বাসিদা রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কোথায় থাকবেন?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছেড়ে যাচ্ছেন।

আগামী সোমবার বেলা ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ হবে বঙ্গভবনে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে।

দায়িত্ব হস্তান্তরের পর বঙ্গভবন ছেড়ে আবদুল হামিদ উঠবেন রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজের বাড়িতে। আসবাবপত্রসহ সব সরঞ্জাম এরইমধ্যে সেই বাসায় ওঠানো শুরু হয়েছে।

১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়কে তিন কাঠা জমি পান আব্দুল হামিদ। ২০০০ সালের শেষ দিকে সেখানে বাড়ির কাজ ধরেন। কয়েক বছর কাজ শেষে তৈরি হয় তিনতলা বাড়ি।

রাষ্ট্রপতি প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেয়াদ শেষে নিকুঞ্জের বাসায় উঠবেন। নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানের পর বঙ্গভবনে তার বিদায় অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানের শেষে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও রাষ্ট্রীয় প্রটোকল অনুযায়ী নিকুঞ্জের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে।”

নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় ইতোমধ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। সব ধরনের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে খিলক্ষেত থানা থেকে।

নিয়ম অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারে বসিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেবেন আব্দুল হামিদ। এরপর ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে তাকে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড দেবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট।

অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সাজানো একটি গাড়ি। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তারা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি ধরে দাঁড়াবেন। তারপর গাড়ি সামনে অগ্রসর হবে।

বঙ্গভবনের ভেতরে সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিজিআর সদস্যরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেবেন এবং আবদুল হামিদ বঙ্গভবনকে বিদায় জানিয়ে একটি খোলা জিপে করে সেখান থেকে বের হবেন।

গত মার্চে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রাষ্ট্রপতি হামিদ তার অবসরে আড্ডা দিতে সাংবাদিকদের নিকুঞ্জের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখেন।

সে সময় তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে তিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে সময় কাটাবেন। আর অবসরে আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড লেখার কাজ শেষ করবেন।

যেসব সুযোগ–সুবিধা ভোগ করবেন

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার পর আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসাসুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ।

‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনে’ সাবেক রাষ্ট্রপতিরা কী কী সুযোগ-সুবিধা, কীভাবে পাবেন তা নির্ধারণ করা আছে।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন আমৃত্যু।

অবসর ভাতা পাওয়ার যোগ্য একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) নিতে পারেন।

‘দ্য প্রেসিডেন্টস (রেম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন ব্যক্তিগত সহকারী এবং একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন আবদুল হামিদ। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসাসুবিধা পাবেন।

আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় থাকার সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ। তিনি দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, এর পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করে দেবে।

দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালের ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি; ২৪ এপ্রিল শপথ নেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন। রোববার তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশে এত দীর্ঘসময় রাষ্ট্রপতি থাকার রেকর্ড আর কারও নেই। বাংলাদেশের আইনে দুই মেয়াদের বেশি কারও রাষ্ট্রপতি থাকার সুযোগও নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *