মুহাম্মদ নাজমুদ্দীন, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রশ্ন : পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো যাবে কিনা; কুরআন হাদিসের দৃষ্টিতে আপনাদের মতামত জানতে চাই।
উত্তর : পিতামাতার বদৌলতেই আজ আমরা পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখছি। বেড়ে উঠেছি। বিশ্বের নিয়ামতরাজি ভোগ করে উপকৃত হচ্ছি। আমাদের জীবনে পিতা-মাতার অবদান অনেক, অনস্বীকার্য। এজন্যই মহান স্রষ্টা পিতা-মাতার সর্বাধিক গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে একাধিক বার তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেছেন। সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বলেছেন। পরম যত্ন সহকারে সেবা ও খেদমত করতে বলেছেন। যেখানেই মহান স্রষ্টা তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেছেন, সেখানেই পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায়ের আদেশ করেছেন।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি- যেন তারা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে। কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পরেই সে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে। তুমি তোমার নিজের সৃষ্টির জন্য আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার লালন পালনের জন্য পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায় করো। অবশ্য তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। (সূরা লোকমান, আয়াত- ১৪)
আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ইবাদতের সাথে সাথে পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দান করেছেন, তোমরা একমাত্র তারই বন্দেগী করবে এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি পিতা-মাতা উভয়ই বা কোনো একজন তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে কোনো কারণে বিরক্ত হয়ে তাদের উফ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না বরং তাদের সাথে সম্মানজনক ভদ্রচিত কথা বলো। (সূরা বানি ইসরাঈল, আয়াত- ২৩)
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতা-পিতার সন্তুষ্টি জান্নাতপ্রাপ্তির মাধ্যম বলে ঘোষণা করেছেন। । যে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। বলা হলো- কার ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, যে তার মাতা-পিতাকে অথবা দুইজনের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ জান্নাতে যেতে পারল না’- [সহীহ মুসলিম]।
অন্য হাদিসে পিতামাতার সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যদি মাতা-পিতাকে সন্তুষ্ট করা যায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও সন্তুষ্ট হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে’ -[তিরমিজি]।
মাতা-পিতার সঙ্গে অবাধ্যতা বেড়ে যাওয়া হচ্ছে কিয়ামাতের আলামত। আর মাতা-পিতার সঙ্গে সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা হচ্ছে, সন্তান আপন মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ ও খিদমাত বাদ দিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া। এটা ঈমানদারের চরিত্র নয় এমনকি অনুপম চরিত্রও নয়। যেখানে পিতামাতার সাথে উফ শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে অবর্ণনীয় কষ্টে ফেলে দেয়া নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘৫০ হাজার বছরের দূরত্বে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। আর অবাধ্য (সন্তান) এ ঘ্রাণও পাবে না।’ [তাবরানি]।
তাই সব সন্তানের আবশ্যকীয় কর্তব্য হল, পিতামাতার সাথে সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা। তাদের দেখাশোনা ও ভরণপোষণের পূর্ণ ব্যবস্থা করা। তাদের সার্বিক পছন্দ ও অপছন্দের প্রতি খেয়াল রাখা।