বেকারদের টার্গেট করে ইমো হ্যাকিং প্রশিক্ষণ!

বেকারদের টার্গেট করে ইমো হ্যাকিং প্রশিক্ষণ!

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ইমো হ্যাক করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একাধিক চক্র। সম্প্রতি এমন একটি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো— মো. শিপন আহম্মেদ ওরফে আরিফ, মো. মজিবুল ইসলাম ও মো. রাসেল আহম্মেদ।

পুলিশ বলছে, এ চক্রটি গেল তিন/চার বছরে ইমো হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চাকরি ছেড়ে ঐসব এলাকার অনেক যুবক জড়াচ্ছে এ হ্যাকিংয়ে। এ ধরনের অপরাধে (হ্যাকিং) জড়িতরা এতদিন শুধু নাটোর জেলার লালপুর এলাকায় থাকলেও এখন আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ছে।

জানা যায়, রাজধানীর এক স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনের ইমো হ্যাক করে প্রতারক চক্র তার দেশে এবং প্রবাসে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখখানেক টাকা। তিনি বিষয়টি জানতে পারেন স্বজনদের কাছ থেকেই; পরে মামলা করেন।

এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ রাজশাহী আর নাটোর এলাকার ইমো হ্যাকারদের সম্পৃক্ততা পায়। জানা যায়, এর মধ্যে শিপন ওরফে আরিফ এ হ্যাকিং চক্রটির মূলহোতা।

কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করা রাজশাহীর শিপন প্রথমে হ্যাকিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়। পরে সে নিজেই গড়ে তোলে ইমো হ্যাকিংয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার বেকার যুবকদের টাকার বিনিময়ে সে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সৌদি আরব ও কুয়েতে থাকা প্রবাসীদের টার্গেট করে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় শিপনের শিষ্যরা। আর সেই প্রতারণার টাকার একটি অংশ পেতে থাকে শিপন।

ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতারকদের প্রশিক্ষক শিপন একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। দ্রুত টাকা আয় করার জন্য এ পদ্ধতিতে সে প্রথম অংশ নেয়। প্রায় ৪ বছরে সে একাই অনেক ঘটনা ঘটায়।

তিনি বলেন, একটা সময় সে নিজেই প্রশিক্ষক হয়ে যায়। এলাকা থেকে নিম্ন আয়ের ছেলেদেরকে টার্গেট করে। এদের মধ্যে কেউ মাটি কাটার ডাম্পার চালায়, কেউ ড্রাইভার, আবার কেউ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে ঝরে পড়া ছাত্র। এদেরকে টার্গেট করে অলিখিত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলে শিপন। সে ৩ থেকে ৪ বছরে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়।

মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, এরই মধ্যে চক্রটি ধরা পড়েছে। এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ইমো হ্যাকিং করা হয়, এমন একটি অ্যাপসেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।

এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা আরও বেশ কিছু প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষকের সন্ধান পেয়েছি। আরও বড় একটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নামে-বেনামে অন্য কারও জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে ঐ এলাকায় খোলা সিম বিক্রি হয়। একটি সিম এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ওই সিমে বিকাশ, নগদ, রকেট অ্যাকাউন্ট খোলা থাকে। তাই প্রশিক্ষণার্থী হয়ে থাকলে ওই সিমটি কিনে সরাসরি মাঠে নামা যায়। কারণ এর ভেতর সব ইনপুট দেয়া থাকে।’

গোয়েন্দারা বলছেন, নাটোরের লালপুর ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে এ ‘হ্যাকিং বিদ্যায়’ পারদর্শী হয়ে উঠছেন রাজশাহীসহ পাশের জেলার অনেকেই। তারা মানুষকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, যেকোনো লেনদেনের পূর্বে মেসেজের উপর নির্ভর না করে যথাযথভাবে যাচাই করে নেয়া উচিৎ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *