১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৯ই রজব, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ‘ভারত আমাদের দেশ, এ দেশের জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষরা সংগ্রাম করেছেন’—বলে মন্তব্য করেছেন জমিয়তে উলামা হিন্দের সভাপতি, দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন, আমীরুল হিন্দ, আওলাদে রাসূল, আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী।
সোমবার (৯ জানুয়ারী) ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় জমিয়ত উলামা হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন এসব কথা বলেন।
নয়াদিল্লিতে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মাদানি হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেশে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িকতা, চরমপন্থা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি চরম বৈষম্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
বৈঠকে বলা হয়, এ বৈষম্য দেশের শান্তি, ঐক্য সংবিধানের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দলীয় বিষয়ের পাশাপাশি সমসাময়িক শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের বিষয় ও পদ্ধতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
বৈঠকে, আসামের নাগরিকত্ব এবং দেশের ধর্মীয় ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে জমিয়ত উলামা হিন্দের আইনি সহায়তা কমিটির সহায়তায় আইনি লড়াই করা মামলাগুলির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর দরিদ্র ও অভাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি এক কোটি থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট থেকে আরও বেশী দরিদ্র শিশুকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
এ উপলক্ষে ভাষণ দিতে গিয়ে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন,—’একদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদের ইন্ধন ও জনগণকে বিদ্বেষের মাধ্যমে মুসলমানদের মন ভরিয়ে দেওয়ার জঘন্য প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, অন্যদিকে মুসলমানদের শিক্ষা ও রাজনৈতিকভাবে অসহায় করার বিপজ্জনক পরিকল্পনাও শুরু হয়েছে।’
‘গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকাংশে দুর্বল হয়েছে এবং বেকারত্ব উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা দেশের উন্নয়নের পতাকা উড়াচ্ছে ও পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া সমর্থন করছে। তবে মনে রাখবেন মুসলিম-অমুসলিম কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি জুলুম সহ্য করা হবে না। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেদের হক আদায় করবো ইনশাআল্লাহ।’—তিনি আরও যোগ করেন।
দলমত নির্বিশেষে দেশের সবাইকে আবেগপ্রবণ রাজনীতির পরিবর্তে চরমপন্থী ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়ে মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেন,—’পারস্পরিক সহনশীলতা এবং ন্যায়ের দাবি পূরণের জন্য যথাসম্ভব সংগ্রাম করুন, যদি ফ্যাসিবাদী দল ও তাদের সমর্থকরা বিশ্বাস করে যে মুসলমানরা তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে তাদের অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হবে, এটা তাদের অলৌকিক কল্পনা বৈ কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের দেশ। আমরা এই দেশে জন্মেছি এবং এ দেশের পরিবেশে আমরা বড় হয়েছি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই দেশকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীলই করেনি। তারা নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ মুসলমান বা অন্য কোনও গোষ্ঠীর প্রতি অবিচার সহ্য করবে না। এদেশে কোন ধরণের বৈষম্য সহ্য করা হবে না।’
জামিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ছাড়াও জমিয়তে উলামা হিন্দের মহাব্যবস্থাপক মুফতি মাআসু সাকিব, মাওলানা সৈয়দ আসজাদ মাদানী, মাওলানা সৈয়দ শহীদ রশিদী, মুফতি গিয়াসউদ্দিন হায়দরাবাদ, মাওলানা মুশতাক আনফার আসাম, মাওলানা বদর আহমদ মুজব্বী পাটনা, মাওলানা আবদুল্লাহ নাসির বেনারস, ক্বারী মাওলানা ফারুক। শামসুদ্দিন কলকাতা, মুফতি আশফাক আহমদ আজমগড়, হাজী সালামাতুল্লাহ দিল্লী, এডভোকেট ফাজেল আইয়ুবী দিল্লী, মাওলানা ফজলুর রহমান কাসেমী ছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে মাওলানা মুহাম্মদ মুসলিম কাসেমী দিল্লী, মাওলানা মুহাম্মদ রশিদ রাজস্থান, মাওলানা মুহাম্মাদ খালিদ হরিয়ানা, মাওলানা মাকরাম আল হুসাইনী দিল্লী, মাওলানা মুহাম্মাদ রশিদ রাজস্থান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: মিল্লাত টাইমস।