নিজস্ব প্রতিবেদক • রফতানিতে আশার আলো দেখাচ্ছে বাইসাইকেল। এক দশক আগেও দেশের চাহিদা মেটাতে বাইসাইকেল আমদানি করা লাগতো। কিন্তু এখন বদলে গেছে সেই চিত্র। আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে ক্রমেই শক্তিশালী অবস্থান করে নিচ্ছে বাংলাদেশের বাইসাইকেল। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত বাইসাইকেল রফতানি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। এর ফলে কয়েক বছর আগে রফতানির শীর্ষে থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ থাকলেও এ বছর দখল করে নিয়েছে তৃতীয় স্থান। তবে অ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করায় বর্তমানে ইউরোপের বাজারে চীনের বাইসাইকেল রফতানি কম। ফলে বাংলাদেশের এই রফতানি বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের পর চীনের উপর থাকা অ্যান্টি-ডাম্পিং প্রত্যাহার করা হতে পারে। তখন ইইউর বাজারে কিভাবে টিকে থাকতে হবে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক ব্যবসা ও প্রতিযোগিতা বিষয়ক পরামর্শক নাদিম রিজওয়ান।
বাংলাদেশের বাইসাইকেলের সম্ভাবনা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাংকের ব্লগে নাদিম রিজওয়ানের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাইসাইকেল রফতানিকারক দেশ। আর সামগ্রিকভাবে বিশ্বের রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ৮ম। দেশের প্রকৌশল খাতের রফতানিতে বাইসাইকেল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাংলাদেশ থেকে সাইকেল রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক নাদিম রিজওয়ান তার প্রবন্ধে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রকৌশলখাতের রফতানির বড় অংশ আসে বাইসাইকেল খাত থেকে। যা মোট রফতানির প্রায় ১২ শতাংশ। এই রফতানি বেশি হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে চীনের বাইসাইকেল রফতানিতে ইইউর অতিরিক্ত অ্যান্টি ডাম্পিং আরোপ। সম্প্রতি ইইউর নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চীনের বাইসাইকেল রফতানিতে ২০১৮ সালের আগে অ্যান্টি-ডাম্পিং কমানো হবে না। কারণ চীন ইইউর অ্যান্টিং-ডাস্পিং নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ধারণা করা হয়, ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে বাইসাইকেলের বাজার প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। তৈরি পোশাকের মত এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও বড় সুযোগ রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের পর চীনের বাইসাইকেল রফতানিতে যদি অ্যান্টি-ডাম্পিং কমানো হয়, তাহলে বাংলাদেশের সাইকেলের মূল্য কিছুটা কমতে পারে। কারণ বাংলাদেশী সাইকেল রফতানিকারকদের হিসাবে, চীনের ক্ষেত্রে অ্যান্টি ড্যাম্পিং প্রত্যাহার করা হলে বাংলাদেশী সাইকেলের চেয়ে চীনের সাইকেল উৎপাদনে ব্যয় কমবে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ইইউতে চীনের রফতানি ৩৫ থেকে ৫০ বেড়ে যেতে পারে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কিভাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে সামনে এগুবে? এর সমাধান হিসাবে নাদিম রেজওয়ান বলেন, ইইউর বাজারে রফতানি ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশের বাইসাইকেল উৎপাদনে ও রফতানিতে যেসব বাধা আছে তা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের ডায়াগনস্টিক ট্রেড ইন্টিগ্রেশন স্টাডি কিছু পরামর্শ দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যেমন, বাংলাদেশকে রফতানি ভিত্তিক মূল সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে এবং সেগুলো স্থানীয় পর্যায়েও সরবরাহ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের সাইকেল উৎপাদনকারীদের যন্ত্রাংশ আমদানি করেই সাইকেল উৎপাদন করতে হয়। আর এই আমদানি পর্যায়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। কিন্তু স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ পাওয়া গেলে অনেকেই বাইসাইকেল উৎপাদনে আগ্রহী হবে। উৎপাদনও বেড়ে যাবে। তখন রপ্তানীতেও এগিয়ে থাকা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাজার কিভাবে দখলে নিতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বাজার বিস্তৃতির জন্য ব্যবসায় ব্যয়, ও সময় কমিয়ে আনাসহ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্থাপন করতে হবে যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা। কমিয়ে আনতে হবে শুল্ক। এছাড়া যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা স্থাপনে সহজ ঋণের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে মানসম্মত সাইকেল উৎপাদনো মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ নিতে পারে। তবে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ধীরে ধীরে বাইসাইকেল রফতানি মূল্য হাতের নাগালে আসলে বাংলাদেশের বাইসাইকেল খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হবে। একই সাথে বাড়বে কর্মসংস্থানও।