পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: হাঁড় কাঁপানো শীতের দাপটের মধ্যে প্রকৃতিতে এলো মাঘ। ’মাঘের শীত বাঘের গায়’-লোককথার আক্ষরিক অর্থে না হলেও মাঘ মাসের পয়লা দিনেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মানুষ। গতকাল সোমবার কনকনে শীতের প্রকোপ বাড়লো প্রায় সারাদেশে। হিমেল বাতাস আর শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার সঙ্গে ছিল কুয়াশার ভারি আবরণ। রাজধানীসহ ৯ জেলায় তিন দিন পর উত্তাপহীন-ধুসর সূর্যের মুখ দেখা গেছে ক্ষণিকের জন্য। তখন শীত সামান্য হ্রাস পেলেও রাত নামতেই আবারো কামড় বসায় শীতের তীব্রতা।
গতকাল দিবানিশি বহু স্থানে ভারী কুয়াশা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মতো ঝরেছে। মানুষের দুর্বিসহ অবস্থা। নয়দিন সূর্যের দেখা নেই রংপুর অঞ্চলে। উত্তরের অবস্থা বড় সঙ্গীন। অন্তত: ১২ টি জেলার ওপর মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। ক্ষতি হচ্ছে রবিশষ্যের। কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা ভিড় করছেন হাসপাতালে। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। গতকাল ঠাণ্ডাজনিত কারণে স্ট্রোকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে এক চীনা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রেন ঝি (৪০)।
কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে,আগামীকাল বুধবার থেকে বৃষ্টি হতে পারে। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় ভারি কুয়াশার সাময়িক বিদায় ঘটবে।বৃষ্টির পর শীত নতুন করে জেঁকে বসতে পারে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আজ ১৬ জানুয়ারিও বৃষ্টি হতে পারে। আজ সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল ভোরের মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী মেঘালয় পর্বতের উপরে অল্প বজ্রপাত সহ হালকা মানের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।আগামীকাল ১৭ ই জানুয়ারি বেলা ৩ টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ময়মনিসংহ ও সিলেট বিভাগের কোন-কোন জেলার উপরে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল রাত ১২ টার পর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যাঞ্চলের উপরে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়ে ভোর ৪ টা থেকে ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০ টার মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর উপরে দিয়ে ও সকাল ৮ টার পর থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে ঢাকা, বরিশাল, ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড,মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটে গতকাল ক্ষণিকটা সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে কুয়াশা থাকায় সূর্যের আলোর তেজ তেমন ছিল। ঢাকায় মাঝারি কুয়াশা আছে। দিনের তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তাতে শীতের অনুভূতির তীব্রতা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, বরিশাল ও ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জানিয়ে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, যেসব জেলায় শৈত্যপ্রবাহ নেই, সেখানেও অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। অনেক জায়গায় বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যেরও। তীব্র ঠাণ্ডায় কঠিন হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগামীকাল বুধবার খুলনা বিভাগে হালকা বৃষ্টি বা গুড়ি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পরে কুয়াশার ভাব কমবে। এবং তাপমাত্রাও কমে শীত কিছুটা বাড়বে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে,গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে দেশের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।এই সময়ে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। রাজধানীতে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা রবিবার ছিল ৩। একইভাবে ২৫ জেলার তাপমাত্রা এখন ১২ ডিগ্রির নিচে।
ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ কৃষি মন্ত্রণালয়ের:
শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মাঠের ফসল রক্ষায় জরুরি পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যা মেনে চললে শৈত্যপ্রবাহ থেকে আবাদি ফসল রক্ষা করা যাবে। শৈত্যপ্রবাহ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শগুলো হলো-১) কুয়াশা ও মৃদু অথবা তীব্র শীতের এ অবস্থায় বোরো ধানের বীজতলায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে।২) ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা এবং চারার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বীজতলা রাতে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, বীজতলা থেকে পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে এবং প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে।৩) আলুর নাবি ধ্বসা রোগের আক্রমণ হতে পারে। প্রতিরোধের জন্য অনুমোদিত মাত্রায় ম্যানকোজেব গোত্রের ছত্রাকনাশক ৭ থেকে ১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।৪) সরিষায় অলটার নারিয়া ব্লাইট রোগ দেখা দিতে পারে। রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদিত মাত্রায় ইপ্রোডিয়ন গোত্রের ছত্রাকনাশক ১০ থেকে ১২ দিন পরপর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করতে হবে।৫) ফল গাছে নিয়মিত হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আজ সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাথে ঘন কুয়াশায় গোটা উপজেলায় মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। প্রচণ্ড শীতে সোমবার সকালে কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন আরএনপিসিএল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচণ্ড শীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চায়না শ্রমিক রেন ঝি (৩৯) মারা গেছে।