সমুদ্রসহযোগিতা জোরদার করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

সমুদ্রসহযোগিতা জোরদার করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ● ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেরিটাইম সহযোগিতা জোরদার করার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দক্ষ নাবিক তৈরিতে বাংলাদেশে একটি টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়  প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও জাকার্তার লিডারস সামিটে তুলে ধরেছেন তিনি। আইওআরএ-এর ২০তম  প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আয়োজিত এই সম্মেলনে ১৮টি দেশের সুলতান, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন।

জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে বুধবার সকালে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ‘শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরের জন্য সমুদ্র সহযোগিতা জোরদার’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশের  প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠার কারণে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করার পরও এ অঞ্চলের নাবিক ও মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা মাঝেমধ্যেই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ কারণে নাবিক ও সমুদ্রগামী অন্য পেশাজীবীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সবার  প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই অঞ্চলে দক্ষ নাবিক তৈরির জন্য বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান ওশান টেকনিকাল অ্যান্ড ভোকেশনাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের  প্রস্তাব করছি। ‘ব্লু ইকোনমি’ নিয়ে আইওআরএ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ‘কমন ইন্টারেস্ট’ এর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে সদস্য দেশগুলোর  প্রতি আহ্বান জানান।

‘ব্লু ইকোনমি-ই যদি ভারত মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোর অর্থনীতিকে ভবিষ্যত নির্ধারক হয়ে থাকে, তাহলে এখন থেকেই বন্ধুত্বের দ্বার উন্মোচন এবং উত্তেজনা কমিয়ে আনতে আমাদের সমুদ্রকে আমাদের কাজে লাগানো উচিৎ। সেইসঙ্গে সকলের নৌ-স্বাধীনতার  প্রতি সম্মান দেখানো উচিত এবং আইওআরএ-র মাধ্যমে সহযোগিতা বাড়ানো উচিত। শেখ হাসিনা বলেন, যে বৃহত্তর লক্ষ্যের পথে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে, ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাগর ও সমুদ্রপথ ধরে উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ তার একটি অংশ। তিনি বলেন, আসুন, আমরা সবাই সমুদ্র সহযোগিতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেই এবং ভারত মহাসাগরকে একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করি। শান্তি ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কেবল সরাসরি যোগাযোগ নয়, আমরা চিন্তা, উদ্ভাবন, ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি এবং পর্যটনের মাধ্যমেও যোগাযোগ বাড়াতে চাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেÑ শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে আমরা মানুষের হৃদয় ও মনের যোগাযোগ বাড়াতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই লিডারস সামিট আয়োজনের জন্য ইন্দোনেশিয়া সরকার এবং এর জনগণকেও ধন্যবাদ দেন। বক্তৃতায়  প্রধানমন্ত্রী ৪৭ বছর আগে এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের কথাও স্মরণ করেন। ৭ মার্চের সেই ভাষণ বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল জানিয়ে বক্তৃতার শুরুতেই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার কথা সম্মেলনে উপস্থিত আইওআরএ নেতাদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ছোট দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহারের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক মঙ্গল। এ কারণেই আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজি-১৪-কে যুক্ত করেছি, যেখানে নতুন করে ব্লু ইকোনমিতে নজর দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও এর  প্রতিবেশীরা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার এক নতুন দিগন্তে যাত্রা করেছে। তবে বিশাল এ সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে সমুদ্রসীমার  প্রতিবন্ধকতাগুলোকে আমরা কতটা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারি তার উপর। বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ‘জ্বালানি সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করেছে’ জানিয়ে  প্রধানমন্ত্রী  প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নেয়া যৌথ উদ্যোগগুলোর কথা সম্মেলনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামুদ্রিক শিল্পের উপর ভিত্তি করে সাগর ও বায়ুর শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিবর্তনী বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আমরা আশা করছি, জ্বালানি নিরাপত্তায় নতুন পৃথিবী গড়তে ভারত মহাসারীয় অঞ্চলের দেশগুলোও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ  প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ যে ঝুঁকির মুখে রয়েছে, সে কথাও সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা উষ্ণতা বৃদ্ধির এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী নই। কিন্তু আমরাই হচ্ছি এর ভয়াবহতার শিকার। আমরা জলবায়ু বিষয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও লিডারস সামিটে তুলে ধরে বলেন। তিনি বলেন, সহিংস উগ্রবাদ থেকে সৃষ্ট সন্ত্রাস প্রতিরোধে আইওআরএ-র ঘোষণার মধ্য দিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে সহযোগিতা ও সমন্বয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *