সৌহার্দ্য বাড়ায় রোজা |  কাউসার মাহমুদ

সৌহার্দ্য বাড়ায় রোজা | কাউসার মাহমুদ

কারও প্রতি ক্ষোভ নেই। অভিমান, রাগ যাকিছু এমন সব শীতল হয়ে আসে রমজানে। ঘোর দুশমনকেও মনে হয় কাছের বন্ধু। প্রতিশোধের ইচ্ছে মিইয়ে গিয়ে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে দাঁড়ানো হয় তারাবীতে। এ মাস যেন মুসলিম বিশ্বে মানবের প্রীতির সম্মেলন। এসময়ে প্রত্যেক রোজাদার হয়ে ওঠে সংযমী। ‘ইছার’ তথা অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার যে মানবিক শক্তি এ মাসে তা পরিপূর্ণ প্রয়োগ হয় প্রত্যেকজন মুসুল্লিতে। মসজিদে নামাজে সন্ধ্যায় ইফতারে এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি হয় মানুষের ভেতর।

বিশেষকরে ইফতারের সময় ঢাকা শহরের মার্কেট আর শপিংমলগুলোতে দেখা যায় এক দারুণ দৃশ্য। চেনা নেই। জানা নেই। অথচ দোকান পেরিয়ে যেতেই ডাক পড়ে,ভাই! বসে পড়েন।না বসলে জোর করে এনে বসানো। কি গভীর সৌজন্যতা। কি অপরূপ অচেনা বন্ধন।

এ মাসে ধৈর্য আর সহিষ্ণুতার পরিচয় পাওয়া যায়। কোথাও অত্যুক্তি নেই। কোনও অভিযোগ নেই। অপরাধ করলেও তাকে ক্ষমা দেয়া হয় রোজার মাহাত্ম্যে। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় থাকবে না কোনও অশালীনতা, অশুভ আচরণ। রিক্সা চালক থেকে শুরু করে বাসের হেলপার সবাই ভালো আচরণে মুগ্ধ হোক। দোকান, গাড়ীতে যথাযথ বিল পরিশোধ করে দেয়া হোক ঠিক সময়ে। বাড়াবাড়ী ঝগড়া-প্রতারণা মুছে যায় রোজাদার থেকে।তার আচরণে লেগে থাকে বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তা। সকল বিশৃঙ্খলা, অধৈর্য ও অসহিষ্ণুতা চলে যাবে মুমিন থেকে।


রোজাদারও যেন, নিজেকে পুড়িয়ে ক্রমাগত আত্মিক পরিশুদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়। পুরনো দুশমন দেখলেও হাসি দিয়ে বুকে টেনা নেয়া যেন এই মাসেরই মাহাত্ম্য। তাইতো বলা হয় এ মাস মানব প্রীতির সম্মেলন। যেনো মানুষে মানুষে এক সৌহার্দ্য রচনা


কেননা হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে। রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রেজা রাখবে সে যেন অন্যায় অপরাধ ও গুনাহ না করে। অতএব, কেউ যদি রোজাদারকে গালি দেয় বা আঘাত করে, তখন রোজাদার যেন বলে আমি রোজা রেখেছি (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং; ৭৩৩৬)
এ মাস অন্য সবকটি মাসের মতো নয়। এ মাসে ভিন্নতা আসে রোজার আবেদনে। রোজাদারের আচরণে আসে ধীরতা, নম্রতা, কোমলতা।অন্যের প্রতি ক্ষমা, দয়া ও ভালোবাসায় গড়ে ওঠে হৃদ্যিক আত্মীয়তা। ঈমানের খাতিরে হয় একে অন্যের দ্বীনি ভাই। প্রবাদ যেমন আছে, সোনা পুড়ে খাঁটি হয়। তেমনি রোজাদারও ঠিক নিজের প্রবৃত্তি দূর করে হয়ে ওঠে নিরেট, খাঁটি। আমরা জানি, মানবিক শুদ্ধতাই হলো মূ্ল। তাই রোজাদারও যেন, নিজেকে পুড়িয়ে ক্রমাগত আত্মিক পরিশুদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়। পুরনো দুশমন দেখলেও হাসি দিয়ে বুকে টেনা নেয়া যেন এই মাসেরই মাহাত্ম্য। তাইতো বলা হয় এ মাস মানব প্রীতির সম্মেলন। যেনো মানুষে মানুষে এক সৌহার্দ্য রচনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *