১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ২০শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কয়েকদিন আগেই রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনকে “স্যার” ডাকতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুখ। ঘটনাটি সারাদেশে আলোচনার ঝড় তুলেছিল। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার কিশোরগঞ্জে ‘স্যার’ সম্বোধন না করে ‘ভাই’ বলায় শিক্ষকের ওপর চড়াও হলেন সরকারি এক কর্মকর্তা।
গতকাল রবিবার (২৬ মার্চ) কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এদিন সকালে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে শহিদ সেলিম স্মৃতি ভাস্কর্য শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে কুলিয়ারচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান এমন ঘটনা ঘটান।
ঐ অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। এ সময় ঐ সরকারি কর্মকর্তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন না করে ‘ভাই’ বলায় লুৎফুল আজাদ নামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের ওপর চড়াও হন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী লুৎফুল আজাদ কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের উত্তরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সভাপতি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাধীনতা দিবসের ঐ অনুষ্ঠান চলাকালে শিক্ষক লুৎফুল আজাদ সরকারি কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমানকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। এতে মুশফিকুর খেপে যান এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাইক্রোফোনের সামনেই বলতে থাকেন, “কে আপনার ভাই? নিজেকে কত বড় নেতা দাবি করেন? স্যার বলেন নাই কেন?”
এ সময় অনুষ্ঠানে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম, কুলিয়ারচর থানার ওসি গোলাম মস্তুফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছাসহ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক লুৎফুল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আমাদের সংগঠনের পক্ষে ফুল দিতে এসেছিলাম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও সংগঠনের নাম না বলায় আমি ওনাকে ভাই সম্বোধন করে বিষয়টি জানতে চাই। তখন তিনি সবার সামনে আমার ওপর চড়াও হন। স্যার না বলায় তিনি আমার ওপর এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন বুঝতে পারিনি। এ সময় শিক্ষক হিসেবে নিজের কাছেই খুব অপমানবোধ করছিলাম।”
যদিও কুলিয়ারচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মুশফিকুর রহমান বিষয়টিকে ভুল–বোঝাবুঝি বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “ঘটনাটি নিছক ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। আসলে পুষ্পার্ঘ্য পর্বে সিরিয়াল নিয়ে সবাই আমাকে বিরক্ত করছিলেন। সবার দাবি তাদের সংগঠনের নাম আগে ডাকা হোক। লুৎফুল আজাদ সাহেবও এসে যখন আমার কাছে একই ইস্যুতে কথা বলতে চাচ্ছিলেন, তখন আমি মেজাজ ধরে রাখতে পারিনি। এই ক্ষোভ প্রকাশের সঙ্গে স্যার বলা না বলার সম্পর্ক নেই।”
পরে আজ (২৭ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা দুজনকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইউএনও সাদিয়া ইসলাম বলেন, “ঘটনার সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ নিয়ে কিছু ঝামেলার সৃষ্টি হয়। সবাই সঞ্চালকের ওপর ক্ষুব্ধ হন। শিক্ষক লুৎফুল আজাদের সঙ্গে সঞ্চালকের সামান্য ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। দুজনের সঙ্গেই কথা বলার পর একে অপরের ভুল বুঝতে পেরেছেন।”