১০ ডিসেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’

১০ ডিসেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আজ ১০ ডিসেম্বর। ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’। ১৯৮৭ সালের এই দিনে তৎকালীন সেনাশাসকের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে সংগ্রাম করতে গিয়ে আত্মাহুতি দেন নূর হোসেন। তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ নূর হোসেন এক অনন্য নাম। ইতিহাস নূর হোসেনকে ধারণ করেছে আন্দোলনের এক মহা নায়ক হিসেবে।

বুকে পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক- স্বৈরাচার নিপাত যাক’, স্লোগান ধারণ করে শহীদ নূর হোসেনের মহান আত্মত্যাগের এই দিবসটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। শহীদ নূর হোসেনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সেনাশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অব্যাহত আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সেনাশাসকের পতন ঘটে।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ সকাল ৮টায় রাজধানীর গুলিস্তানে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি ) সকাল ৮টায় শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে (জিরো পয়েন্ট) পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসের সাহসী পুরুষ শহীদ নূর হোসেন দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের জন্য দলের সব সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্যে, নূর হোসেনের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তার পরিবার স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে। পিতা মুজিবুর রহমান ছিলেন পেশায় আটো-রিকশা চালক। তার মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশোনা বন্ধ করে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলা (আওয়ামী মটর চালক লীগের) বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর দেশের দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর পূর্বে এরশাদ ১৯৮২ সালে একটি সেনা উত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন, কিন্তু বিরোধী দলগুলো তার এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিযুক্ত করে। তাদের একমাত্র দাবী ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। অবরোধ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকায় একটি মিছিলে নূর হোসেন অংশ নেন এবং প্রতিবাদ হিসেবে বুকে পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ । মিছিলটি ঢাকা জিপিও-র সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশবাহিনীর গুলিতে নূর হোসেনসহ মোট তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন, এসময় বহু আন্দোলনকারী আহত হন। নিহত অপর দুই ব্যক্তি হলেন যুবলীগ নেতা নুরুল হূদা বাবুল এবং আমিনুল হূদা টিটু

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *