পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৭০% রোগী এ রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সাতজন চিকিৎসা গবেষক গবেষণাটি করেন। এ বছরের জুনে পিএলওএস জার্নালে এটি প্রকাশিত হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য স্থূলতা, শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ এবং তামাক ব্যবহারকে দায়ী করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিত্সকরা। ডায়াবেটিক রোগীরা হৃদরোগ এবং কিডনির নানা সমস্যার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬১.৫% ডায়াবেটিক রোগী জানেন না যে তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শুধুমাত্র ৩৫.২% রোগী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করেন; এবং তাদের মধ্যে ৩০.৪% রোগ নিয়ন্ত্রণে ছিল।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানুষের জীবনযাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, কায়িক পরিশ্রম না করার কারণে মুটিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগী বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ।”
শঙ্কার জায়গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এভাবেই চলতে থাকলে ডায়াবেটিস রোগী বহুগুণে বেড়ে যাবে। এই রোগ তো আজীবনের রোগ এবং ব্যয়বহুল বিষয়। ”
অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, “শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর সব জায়গায় এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। কিছু কিছু রোগীর ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। কারণ, এই রোগের মূল কারণই ইনসুলিন কমে যাওয়া। ইনসুলিন মানুষের জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস। কারও কারও ইনসুলিনের মাত্রা এতই কমে যায়, যার ফলে তাকে আজীবন ইনসুলিন নিতেই হবে। আজীবন ইনসুলিন গ্রহণ করা খরচের ব্যাপার তো বটেই। সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং দেওয়া শুরু করেছে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহাজাদা সেলিম সংবাদমাধ্যম টিবিএসকে বলেন, “ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্রজনন বিষয়ক নানা সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ডায়বেটিস রোগীর ৮০% মারা যায় হার্টঅ্যাটাকে। ডায়বেটিস না থাকলে কিডনি রোগী অনেক কমে যেতো।”
তিনি আরও বলেন, “ডায়াবেটিসের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। ৬১% মানুষ যারা মনে করে তাদের ডায়াবেটিস নেই, কিন্তু টেস্ট করলে দেখা যায় তাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা এতো বেশি যে ওষুধ বা ইনসুলিন শুরু করতে হয়। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের মোট ব্যয়ের ১০% ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। সে কারণে ডায়বেটিস প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে।”