১৪ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১৫ই মহর্রম, ১৪৪৪ হিজরি
‘জামিআ ইকরা’তে প্রথম যেদিন বোখারি শরিফের দরসে বসলাম, সে দিন আমার মনে হয়েছে—আমি বসে আছি মসজিদে নববির আঙ্গিনায়। বোখারির শিক্ষক আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব হুজুরকে দেখে মনে হচ্ছিলো—স্বয়ং ইমাম বোখারি (রহ.) সামনে বসেছেন হাদিসের মর্যাদা ও সম্মানসহ। দরসে হুজুরের কণ্ঠে ‘কালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা, যেন কোনো আদিম আশেকের প্রেমের তাসবি দানা। যা অনন্ত আশ্চর্য নিয়ে মাশুকের হৃদয়ে—হুড়মুড় করে ঢুকছে সফেদ ভালোবাসায় মুক্ত হয়ে।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, আমি বোখারি পাতা থেকে চোখ তুলে হুজুরের দিকে তাকিয়ে—এমন শান্তি অনুভব করলাম, যেমন শান্তি অনুভব করে—কোনো আনারবি প্রথম বাইতুল্লাহ শরিফ দেখে! কিংবা মাসজিদে হারামে নামাজ আদায় করে। ক্লাসরুমের দিকে তাকিয়ে দেখি—হুজুরের প্রতিটি কথা ঝলমলে ফুল হয়ে ফোটে আছে দেয়ালে। রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়ছে পুরো ইকরাজুড়ে। আমি তন্ময় মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করেছিলাম এই দৃশ্য, যেভাবে হাজিরা উপভোগ করে—মক্কা থেকে মদিনায় যাত্রা।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, হুজুরের সুরে—হাদীসের সৌন্দর্য ও নূর পেয়ে, আমার পাপিমনেও বোখারির এবারত পড়ার শখ জাগে। কিন্তু সেদিন আর পড়া হয়নি, কেবল একটি হাদীস পড়ানো হয়েছে বলে। এতে আমার মন এমন ভাবে আক্ষেপ শুরু করতে লাগলো, যেভাবে আল্লাওয়ালা আক্ষেপ করে—কোনদিন তাহাজ্জুদ মিস হয়ে গেলে। তবুও আমি আমার মনকে সান্ত্বনা দিই এই বলে, সামনে এখনো সারাবছর পড়ে আছে। যেভাবে আল্লাওয়ালাকে তার স্ত্রী সান্ত্বানা দেয়—তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ওয়াজিব নয় বলে।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে হুজুর যখন ‘ব্যাপারটা বুঝতে পারলি রে’—‘এসব তোদের শরাশরুওয়াতে পাবি না’ বলে ওঠেন, তখন মনে হয়—কোনো শিশুকে কথা শিখিনোর চেষ্টা করছেন তার আত্মীয়স্বজন। আমরা তখন না বুঝলেও ‘জি’ বলি নিজেদের অজানাতে। যেভাবে প্রথমে শিশুরা অর্থবোধক শব্দ বলতে না পারলেও ‘আ, এ, অউ’ করে। এতেই আনন্দ লাগে আপনজনের। তেমনি হুজুর শান্তি পান আমাদের ‘জি’ বলাতে। যদিও তিনি আমাদের চোখে মুখে—দেখতে পান আধাপাকা আঙুরের বন।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, প্রথম দরস শেষ করে হুজুর যখন চলে যাচ্ছিলেন ক্লাসরুম থেকে, তখন আমার মনে হয়েছে—আব্বা আমাকে বাসায় একা রেখে চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। হুজুর হাঁটছেন নিজ রুমের দিকে—আমরা হাঁটছি হুজুরের পিছে পিছে। অনেকে কথা বলছে হুজুরের সাথে। কিন্তু আমার মন তখন বিড়বিড় করে দুআ করতে লাগে, ‘আল্লা গো, বোখারি শরিফের শেষ দরস পর্যন্ত হুজুর ও আমাকে বাঁচিয়ে রাখো। যেভাবে তুমি নূহ (আ.) এর বন্যার সময় বুড়ি মা কে বাঁচিয়ে ছিলে—অতল প্লাবন থেকে, তোমার কুদরতের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুন: আব্বাকে ফিরিয়ে দাও