পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ‘ইসলাম গৌরবের ধর্ম আর মুসলমান গৌরবময় জাতি ছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
তিনি বলেন, আগেকার সময়ে মুসলমানদের গৌরবের সাথে দেখা হতো, এখন মুসলমান হিসাবে পরিচয় দিলে গৌরবের সাথে দেখা হয় না। মুসলমান হিসাবে পরিচয় দিলে হেয় দৃষ্টিতে দেখা হয়, নিকৃষ্ট নজরে দেখা হয়, খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়।
আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর হাজীপাড়া ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে জুমার বয়ানে ফিদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী (রহ.)-এর এই খলীফা এসব কথা বলেন।
বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের নিপীড়িত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুগশ্রেষ্ঠ এই মনীষী বলেন, মুসলমানরা আজ সারা পৃথিবীতে লাঞ্ছিত, অপদস্থ কারণ, মুসলমান মুসলমানের মতো কাজ করে না, ইসলামের কাজ করে না। ইসলামের কাজ না করেও আমরা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করছি। আমরা শুধু ‘নামে’ মুসলমান।
তিনি বলেন, আমি মুসলমান শুধু দাবি করলেই হবে না, এর পেছনে থাকতে হবে এক বিরাট মেহনত, এক মহাপরিশ্রম। মুসলমানের পরিচয় শুধু কথায় হবে না। মুসলমানের পরিচয় হবে কাজে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কাজে পরিচয় দিয়েছিলেন। আল্লাহওয়ালারা কাজে পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁদের অভ্যাস এমন ছিল যে, একজন অমুসলিম দেখেই বুঝে ফেলত ‘ইসলাম’ কী জিনিস?
দীন প্রতিষ্ঠা হলে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করে উল্লেখ করে এই আধ্যাত্মিক রাহবার বলেন, দুনিয়াতে যখন আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আল্লাহ তাআলা এর ফল মানুষকে দেখান। তখন অন্যায় বিদুরিত হয়, দুর্নীতি বিদুরিত হয়, অত্যাচার বিদুরিত হয়, যুলম থাকে না, শোষণ থাকে না। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই পৃথিবীতে দীন প্রতিষ্ঠা হয় তখনই মানুষের মধ্যে শান্তি এসে যায়। সেটা যে কোনো যুগেই হোক না কেন?
তিনি বলেন, খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে দুনিয়া দেখেছে এবং আজ পর্যন্ত দুনিয়া এটার সাক্ষী যে, সেসময় মানুষের মধ্যে কী ধরণের নিরাপত্তা বিরাজ করেছিলো। যখন খুলাফায়ে রাশেদীন সর্বত্র দীনকে প্রতিষ্ঠা করলেন তখন কী ধরণের নিরাপত্তা, কী ধরণের শান্তি, কী ধরণের সুখ অর্জিত হয়েছিলো। আবার যখন উমাইয়াদের আমলে দীনের ব্যাপারে ত্রুটি শুরু হলো, তখন আবার সেই যুলম, সেই অত্যাচার, সেই শোষণ, সেই বিশৃঙ্খলা, মানুষে-মানুষে মারামারি, হানাহানি আরম্ভ হয়ে গেল।
“কিন্তু সেই উমাইয়াদের আমলেই আল্লাহ তাআলা একজনকে পাঠিয়েছিলেন যিনি খুলাফায়ে রাশেদীনের মতো আবার ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করলেন। খলীফা উমর ইবন আবদিল আযীয (রহ.)। তাঁর খিলাফতকালে আল্লাহ তাআলা শুধু মানুষের মধ্যেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন নাই, শুধু মানুষের মধ্যেই যুলম বিদুরিত করেন নাই, তাঁর এই শাসনের ফলাফল পশু-পাখির মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি মাত্র দুই বছর খলীফা ছিলেন, কিন্তু দুই বছরেই সমস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল।”
দীন প্রতিষ্ঠার চার বৈশিষ্ট্যের কথা জানাতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, দীনকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষের মাঝে চারটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।
“প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, দাওয়াত ইলাল্লাহ। দাওয়াত যদি না থাকে তাহলে ইসলামের প্রাণ থাকে না, বিস্তৃতি থাকে না, প্রচার থাকে না। তাই প্রথম কাজ হবে দাওয়াত দেয়া।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো তালীম। কারণ যে জিনিসের প্রতি দাওয়াত দেয়া হয় সে জিনিসের তরীকা জানা না থাকলে সঠিকভাবে আমল-কাজ করা যায় না। তাই কাজের-আমলের তরীকা বা পথ ও পন্থা শেখার জন্য তালীমের কোনো বিকল্প নেই। দাওয়াতের সাথে সাথে তালীমও থাকতে হবে। দাওয়াতের সাথে তালীম থাকলে দাওয়াত সহীহ হয়, তালীম না থাকলে দাওয়াত আর সহীহ থাকে না।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো তালীম। তালীমের সাথে সাথে আমলও থাকতে হবে। আমল না থাকলে কোনো কিছুই প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। ইলম হাসিলের সাথে সাথে আমলটাও করতে হয়। আমল ছাড়া তালীমের কোনো মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। আমলহীন ইলম কেয়ামতের দিন বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
দীন প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো ইখলাস। যদি ইখলাস না থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা কোনো জিনিসকেই প্রতিষ্ঠা করেন না। ইখলাস না থাকলে দুনিয়াতে যতটুকু তাকদীরে আছে ততটুকু পাবে ঠিকই, কিন্তু আখিরাতে বিন্দুমাত্রও কিছুই পাবে না।”
মিছিল-মিটিংয়ের দ্বারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না মন্তব্য করে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, না মিছিলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে, না প্রচলিত রাজনীতির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে, না অন্য কিছুতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে যদি এই চারটি জিনিস আমাদের মাঝে থাকে। ইসলামকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য প্রতিটি মুসলমানের মাঝে এই চারটি সিফাত-গুণাবলী পয়দা হতে হবে। তখন দেখা যাবে মুসলমানদের দ্বারা আল্লাহ তাআলা দীনকে কায়েম করে দিবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।
গ্রন্থনা: আব্দুর রহমান রাশেদ