কুরআন-হাদীসের চর্চা নির্ভর করে আল্লাহর দেয়া তাওফীকের উপর : আল্লামা মাসঊদ

কুরআন-হাদীসের চর্চা নির্ভর করে আল্লাহর দেয়া তাওফীকের উপর : আল্লামা মাসঊদ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের উপস্থিতিতে রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত জামিআ ইকরা বাংলাদেশের ১৪৪৩-৪৪ হিজরী শিক্ষাবর্ষের ইফতেতাহি দারস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার (২১ মে) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই ইফতেতাহি দারস পরিচলানা করেন জামিআর সিনিয়ন মুহাদ্দিস মুফতি সাইফুল ইসলাম কাসেমি। অনুষ্ঠানে জামিআর আসাতিযায়ে কেরামগণ ছাত্রদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক নসিহত পেশ করেন।

শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ বলেন, কুরআন-হাদীসের চর্চা নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার দেয়া তাওফীকের উপর। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করেছেন বলেই আমরা এখানে আসতে পেরেছি। আল্লাহর তাওফীক না হলে আমাদের এখানে আসা সম্ভব হতো না। এখন আমাদের দায়িত্ব, এই তাওফীককে ধরে রাখা। আল্লাহর সাহায্য না থাকলে তাওফীক ধরে রাখা মুশকিল। আর আল্লাহ তাআলার সাহায্য পেতে হলে আমাদেরকে দুইটি জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে—‘ইখলাস’ ও ‘আদব।’

জামিআ ইকরা বাংলাদেশের রঈস ও ক্বায়িদে মিল্লাত হযরত মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী-এর খলীফা মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ বলেন, তোমরা যদি ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানে এসে থাকো, তাহলে সঠিক গন্তব্যে এসেছো। আর যদি ভিন্ন উদ্দেশ্যে এসে থাকো, তবে বিরাট ভুল করেছো। যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষে ইলম হাসিল করতে চাও, তবে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলার পাশাপাশি শিষ্টাচার রক্ষা করে থাকবে।

দারুল উলুম দেওবন্দকে হকের মাপকাঠি উল্লেখ করে জামিআর সিনিয়র মুহাদ্দিস ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমি বলেন, আমরা মাদরাসায় বিশুদ্ধ ইলম হাসিল করতে এসেছি। আর বিশুদ্ধ ইলম অর্জন করতে হলে আমাদের মানসিকতাকে বিশুদ্ধ করতে হবে। কারণ বিশুদ্ধ ইলমের উপর নির্ভর করে বিশুদ্ধ আমল। প্রতিটি কাজের সময় আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রাখতে হবে। তবেই বিশুদ্ধ ইলম, বিশুদ্ধ আমল ও বিশুদ্ধ মানসিকতা অর্জন—সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। পাশাপাশি এই যামানায় হকের উপর চলতে হলে দারুল উলুম দেওবন্দের আকাবীরদের অনুসরণ করতে হবে। তাঁরাই এ যুগের হকের নমুনা বা মাপকাঠি।

‘জামিআ ইকরা গতানুগতিক মাদরাসাগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা’ মন্তব্য করে জামিআ ইকরার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক মাওলানা হুসাইনুল বান্না বলেন, আপনারা যারা এই মাদরাসায় ভর্তি হয়েছেন সবাইকে আমি মোবারকবাদ জানাই। কারণ আপনারা সঠিক প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করেছেন। জামিআ ইকরা একটি চেতনার নাম। জামিআ ইকরা গতানুগতিক মাদরাসাগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে শুধু বিশুদ্ধ ইলমে ওহী-ই বিতরণ করা হয় না, বিশুদ্ধ ইলমের সাথে আকাবিরে দেওবন্দের বিশুদ্ধ চেতনা ও মানসিকতারও বিকাশ সাধনে কাজ করেন এখানকার আসাতিযায়ে কেরামগণ।

জামিআর সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান কাসেমি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদেরকে সর্বপ্রথম মাদরাসায় আসার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে ঠিক করতে হবে। মাদরাসায় আসার নিয়্যতকে বিশুদ্ধ করতে হবে। কেবল দীনের খেদমত ও ইসলামের খেদমত করার জন্যই ইলমে দীন হাসিল করতে হবে। ফলকে পরিপক্ক হতে হলে যেমনিভাবে গাছের সাথে লেগে থাকতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে মাদরাসার চার দেয়ালের মাঝে নিজেদেরকে বেঁধে ফেলতে হবে। মাদরাসার নিয়ম কানুনগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে কামিয়াব করবেন।

জামিআর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আমিনুর রহমান ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, একজন ভালো ছাত্র হিসেবে তোমাদেরকে কয়েকটি গুণ অর্জন করতে হবে। এক. দরসি কিতাবগুলোতে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বাংলা গাইডের থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হবে। দুই. কুরআন-হাদীসের ভাষা ‘আরবী’-তে গভীর বুৎপত্তি অর্জন করতে হবে। তিন. হাতের লেখা সুন্দর করার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে। চার. দরসে উস্তাযদের তাকরীর লিখতে হবে। পাঁচ. আমলী জিন্দেগী উন্নতি করতে হবে। কারণ, আমলই যদি উন্নতি না হয় তাহলে এ শিক্ষার কোনো ফায়দা নেই। ছয়. কোনো একজন উস্তাযকে নিজের তালিমি মুরুব্বি হিসাবে মেনে নিজেকে সেভাবে চালাতে হবে।

জামিআর ইফতেতাহি দারসে আরও উপস্থিত ছিলেন জামিআ ইকরা বাংলাদেশের প্রশাসনিক মুহতামিম, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও জানেশীন মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, জামিআর সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি হামীদুর রহমান, মুফতি মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াহইয়া, মুফতি মাহমুদুন নবী, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মুফতি রিয়াজুল ইসলাম, মুফতি আবু সালেহ যাকারিয়া, মুফতি মুহাইমিনুল জান্নাহসহ জামিআ ইকরা বাংলাদেশের শিক্ষক, ছাত্র ও স্টাফবৃন্দ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *