১৭ই মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৩ হিজরি
একজন শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। উলামায়ে দেওবন্দের সূর্যসন্তান। আপাদামস্তক আকাবির-আছলাফের রঙে যিনি নিজেকে রাঙিয়েছেন। জীবন যুদ্ধের এক বীর সেনানী। শত বাধা ডিঙিয়ে দেওবন্দীয়্যাত বক্ষে ধারণ করে আছেন। হাজারো প্রতিকুলতার মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ এবং দেওবন্দী চিন্তা-চেতনা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
এমন এক মনীষা তিনি, এ যেন এই শতাব্দীর অন্যতম সিপাহসালার শাইখুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমাদ এর হুবহু প্রতিচ্ছবি। যাকে এই যুগের শাইখুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। সেই মহান ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। হসপিটালের বেডে কাটিয়ে বর্তমানে আল্লাহ তায়ালার খাছ মেহেরবানীতে কিছুটা সুস্থ। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়ে এখন ঘরে বিশ্রামে আছেন।
হসপিটালের বেডে জীবন যুদ্ধে তিনি জাতির রাহবার উলামায়ে কেরামেকে ভুলে যাননি। অসহায় আলেমদেরকে মনে রেখেছেন। বিশেষ করে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বন্দী আলেমদের মুক্তির জন্য দুআ করেছেন। এ যেন বিরল এক ঘটনা। মানুষ হাসপাতালে ইয়া নাফছি! ইয়া নাফছি! করতে থাকে। নিজে বাঁচার জন্য মহান রবের দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম মনে হলো আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবকে। তিনি নিজের অসুস্থতার মধ্যেও ভুলে যাননি আলেমদের কথা। ভুলে যাননি জেলখানার অন্ধকার প্রকষ্ঠে থাকা অসহায় মানুষদের। আর এটাই মানবতা। জীবন সায়হ্নে এসেও তাঁর মানবতা যেন আরো বেশী জাগ্রত হয়েছে। মজলুম মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব এমনই একজন দরদী ব্যক্তিত্ব। অসহায় এবং মজলুম মানুষের জন্য তাঁর প্রাণ কেঁদে ওঠে। একবার হজব্রত পালন শেষে তাঁকে দেখেছিলাম, তাঁর প্রিয় উস্তাদ আল্লামা আশরাফ আলী (রহ.) এর পাশে। আল্লামা আশরাফ আলী এবং তিনি দুজনে এক ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে ফিরছিলেন। আল্লামা আশরাফ আলী ছিলেন অসুস্থ। আবার আল্লামা মাসঊদ সাহেবও অসুস্থ। কিন্তু বয়োজৈষ্ঠ উস্তাদকে অসুস্থ দেখে নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে যান। বিমান থেকে আল্লামা আশরাফ আলীকে তিনি অত্যন্ত আদব-ইহতেরামের সাথে ধরে ধরে নামান। সে দৃশ্যটা অনেকেই সেসময়ে ক্যামেরা বন্দী করেছিলেন। তাঁর সেই গুরু ভক্তি এবং মানবতার দৃষ্টান্ত অনেকের নজর কেড়েছিল।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব আসলেই এক মহান ব্যক্তিত্ব। সত্তোর্দ্ধ বয়স তাঁর। জীবন সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছেন। বয়সের ভারে অনেকখানি দুর্বল এখন। যৌবনের সেই জৌলুস নেই। দিনে দিনে ভাটিতে যাচ্ছেন। বিগত তাড়াইল ইজতেমাতে দেখেছিলাম। নিজে নিজে চলাই কষ্ট। এই সন্ধ্যাবেলাতে তিনি যেন মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন।
আকাবির-আছলাফের পদাঙ্ক অনুসারী তিনি। পূূর্বসূরীদের পথে কদম রেখে চলেছেন। আমাদের বুজুর্গানেদ্বীনের অতীত বড্ড চমৎকার। যেটাকে সোনালী অতীত বলা হয়। মানব সেবায় ওই সকল বুজুূর্গ ব্যক্তিগণ ছিলেন অতুলনীয়। ঠিক সেই পথেই পা রেখে চলেছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর সেবামুলক কার্যক্রম ধারণাতীত। যেটা কল্পনাতেও আসে না, তাঁর মত মানুষ কীভাবে খেদমতে খালকে জড়িয়ে আছেন। অসহায়-দুস্থ মানবের পাশে তাঁর হস্ত প্রসারিত হচ্ছে বারবার। প্রাণ উজাড় করে দিচ্ছেন তিনি। ‘ইসলাহুল মুসলিমিন’ ও ‘বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামা’ এর ব্যানারে বহুমুখি খেদমত করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সর্বত্র ছড়িয়ে আছে সংগঠনের শাখা। একনিষ্ঠ ভাবে মানব সেবায় নিয়োজিত।
জীবনের এই সন্ধ্যাকালে তাঁর খেদমতের যেন অন্ত নেই। মহান রবের দরবারে আমরা মিনতি করি, আল্লামা ফরীদ মাসঊদ সাহেবের সকল খেদমত আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট