ফেদায়ে মিল্লাত থেকে ফেদায়ে উম্মত

ফেদায়ে মিল্লাত থেকে ফেদায়ে উম্মত

ফেদায়ে মিল্লাত থেকে ফেদায়ে উম্মত

মুহাম্মাদ আইয়ুব :: নশ্বর পৃথিবী থেকে যখন কোন ভাল মানুষ অনন্তের পথে যাত্রা করেন তখন ভাল মন্দ, নারী, পুরুষ সবাই একযোগে হু হু করে উঠে। হায়! হায়! উনি চলে গেলেন! এখন কি হবে? উনার মত ভাল মানুষ আর কি পাওয়া যাবে?! ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কি!

আর যদি উম্মতকে এতিম করা ব্যক্তি কোন কামেল বুজুর্গ আলেম, ওলী-আউলিয়া হন তাহলে তো জগদ্বাসীর বুকফাটা আর্তনাদ আর মাতম যেন শেষ হতে চায় না! হায়! হায়! একি হল!!!

ইংরেজ বেনিয়া হায়েনা নাপক অক্টোপাসের ঝাপটায় পাক ভারত উপমহাদেশ যখন পুরোপুরি নাকাল তখন আজাদীর জন্য মুসলমানরা ময়দানে ঝাপিয়ে পড়লেন সর্বস্ব দিয়ে! কিন্তু মীর জাফরদের উবাঈী ধূর্তামিতে মুসলমানরা সব ময়দানে এক চেটিয়া পরাজিত হতে লাগলেন। পরিশেষে হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানুতবী রহ. ঐশী ইশারায় এক তাজদীদী কাজ করে বসলেন দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ব্যস কেল্লা ফতে!

কিন্তু হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল অন্যখানে, যথাসময়ে মাওলায়ে কারিমের ডাকে সাড়া দিয়ে উম্মতের কলিজার টুকরো হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতবী নাওওয়ারাল্লাহু মারক্বদাহু বিশ্ববাসীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন আসমানে! অস্ফুট স্বরে কলজে ছেঁড়া নিশ্বাস ফেলে সবাই উচ্চারণ করল ‘ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’।

এবার তাঁর শূন্যস্থান কে পূরণ করবে, অসহায় উম্মতের হাত কে ধরবে? সবার ভিতর এ ছিল এক চাপা প্রশ্ন, অবধারিত প্রশ্ন। মজার বিষয় হল, প্রশ্ন বিশ্রাম নেওয়ার আগেই উত্তর ভারতবাসীর মুক্তির মঞ্চে হাজির! আরে! এ তো হযরত কাসেম নানুতবী রহ. এর ই হাতে গড়া শিষ্য শায়খুল হিন্দ রহ.!

ব্রিটিশরা ভেবেছিল, এতো দেখছি আগাগোড়া এক মৌলভী, মসজিদ মাদ্রাসায়ই তার দৌঁড় সীমাবদ্ধ, আগাগোড়া একজন হুজুর সো, নো টেনশান! আমাদের বিরুদ্ধে এ কিছুই করবে না! আর করলে কিই বা করতে পারে? তবে ওদের জানা ছিল না যে, সুন্নতী লিবাসে আপাদমস্তক ঢাকা এই ইনিই ‘শিক্ষা ও গবেষণার ময়দানে একজন ধীমান ও বিদগ্ধ গবেষক, রচনা ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী লেখক ও সাংবাদিক আবার ইনিই যুদ্ধের ময়দানে একজন কুশলি ও বাহাদুর সেনাপতি! টুপি দাঁড়িওয়ালা সাধাসিধে এই মানুষটিই রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে একজন প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক ও সংস্কারক’। না কোনদিনই জানত না! ওয়ারিশে আম্বিয়ারা এগুলো ফেরী করে বেড়ান না! তাঁরা প্রয়োজনে জ্বলে উঠেন।

তাই তো শায়খুল হিন্দ রহ. দেশ ও জাতীর জাতীর প্রয়োজনে ব্রিটিশদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে রেশমী রুমাল নিয়ে জ্বলে উঠলেন। আর তাতেই ব্রিটিশ বেনিয়াদের মন ও মননে অশনি সংকেতের ইয়া বড় বড় ঢেউ গর্জন করতে লাগল গেল! সে ঢেউয়ের আছাড় সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে ইংল্যান্ডের বুকে ও পড়তে লাগল! সাময়িক স্বান্তনার জন্য তারা কালবিলম্ব না করে শায়খুল হিন্দ রহ. কে বন্দী করে নিয়ে গেল মাল্টার কুখ্যাত বন্দী শিবিরে! বন্দী শিবির থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন শায়খুল হিন্দ রহ.।

তারপর একদিন রাব্বে কারিমের আহবানে চলে গেলেন অনাবিল শান্তির ঠিকানায়! ইন্না-লিল্লাহর করুণ সুর উঠল দেশ দেশান্তরে। লাখো কন্ঠে আবারও সেই একই প্রশ্ন, হালটা এখন কে ধরবেন? প্রশ্ন উঠতে দেরী ব্রিটিশদের দুঃস্বপ্ন হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চে উপস্থিত হতে দেরী হলনা শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর!

একদিকে ব্রিটিশদের উৎখাত করতে হিন্দুস্তানের এক মাথা থেকে আরেক মাথা চষে বেড়ালেন! দেশ ও জাতিকে পরাধীনতার বৃত্ত থেকে বের করে আনতে নিজের আরাম, আয়েশ, সুখ, আহ্লাদ সব দূরে ছুড়ে মারলেন! দীর্ঘ আন্দোলনের পর স্বাধীনচেতা ভূখন্ড থেকে তাদেরকে ধুয়ে মুছে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে পাঠিয়ে দিলেন।

অন্যদিকে দক্ষ হাতে দারুল উলূম দেওবন্দের হাদীসের মসনদ আর মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি করতে থাকলেন নিয়মিত! দেখতে দেখতে ১৩৭৭ হিজরী কোন প্রভাতে জগত জোড়া খ্যাতি নিয়ে, অসহায় উম্মতকে কাঙাল বানিয়ে চীর শান্তির পথ মাওলায়ে কারিমের রহমতের কোলে আশ্রয় নিলেন হযরত শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ.! বিশ্বজুড়ে ‘ইন্না-লিল্লাহ’র মাতম ধ্বনির সাথে সাথে অবধারিতভাবে সেই প্রশ্ন, হায়! হায়! এখন আমাদের কান্ডারী কে হবেন, কে আমাদেরকে আল্লাহর সাথে জুড়িয়ে দিবেন, কে আমাদের পরকাল নিয়ে ভাববেন?!

এ যাত্রায় ও প্রশ্ন নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবতে হল না, অসহায় জাতীর সহায় হিসেবে, তাদের সুখ দুঃখের হাম সফর হিসেবে মহান আল্লাহ তা’আলা নির্বাচন করলেন জানেশিনে শায়খুল ইসলাম সাইয়্যেদ আস’আদ মাদানী নাওওয়ারাল্লাহু মারক্বদাহুকে। মানুষেরা রাহবার হিসেবে তাঁকে পেয়ে বলাবলি শুরু করে দিল আরে! চলনে বলনে, আচার আচরণে, তাক্বওয়া তহারাতে, ইলম আমলে, দয়া দাক্ষিণ্যে, বুজুর্গী পরহেজগারিতায়, বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন মানসিকতায় ইনি তো হুবহু পূর্বসূরী আকাবিরদের প্রতিচ্ছবি! ইনি তো দেখছি আমাদের মহানবীরই আদর্শ সন্তান!

উম্মতের দুনিয়া ও পরকাল ভাবনায় বিভোর হয়ে হিন্দুস্তান থেকে ইউরোপ, ইউরোপ থেকে আমেরিকা, আমেরিকা থেকে আফ্রিকা, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য কোথায় পড়েনি জানেশিনে শায়খুল ইসলাম রহ. এর পায়ের ছাপ?! একদিকে যেমন ভারতের দূর্গম এলাকায় ঘুরে ঘুরে উম্মতের ধ্বসে পড়া দ্বীনের অবকাঠামো নির্মাণ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন! অন্যদিকে গুজরাট দাঙ্গাসহ সমস্ত দাঙ্গা কবলিত এলাকায় আহত, নিহত, নির্যাতিত, নিপীড়িত অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়ালেন ত্রাতা হয়ে!

খৃষ্টান মিশনারী ও তাদের সমর্থিত এনজিওদের কবল থেকে মুসলমানদের ঈমান, আমল, পরকাল বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী সফর করে করে তহবিল গঠন করতে থাকলেন! যেখানেই উম্মত কাঁদে সেখানেই সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ. ছুটে নানাজানের অনুসৃত পথ পাড়ি দিয়ে! এভাবে উম্মতের জন্য দিশেহারা হয়ে ছুটতে ছুটতে এক সময় তাঁর নাম পড়ে গেল ‘ফেদায়ে মিল্লাত’। উম্মতের জন্য উৎসর্গিত প্রাণ!

উম্মতের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে যেয়ে একসময় তিনি নিজ বাড়িতেই আসতেন মেহমান হয়ে! সন্তান সন্ততিরা সারা বছর চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষায় থাকত কখন আসবে তাদের মেহমানরূপী মেজবান?! পেয়ারা নবীর প্রিয় উম্মতের জন্য উৎসর্গ হওয়ার কোনদিকই তিনি অবশিষ্ট রাখেননি এবং ঠিক এ অবস্থায় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৬ তারিখে চীর শান্তির আবাস মাওলায়ে কারিমের রহমতের কোলে আপন নিবাস গড়ে নেন! ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

অশান্ত অগ্নির মত অশান্ত এ খবরও আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বময়! অসহায় উম্মত আশান্বিত নয়নে ঝাপসা দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকায়! তাদের চাহনির ভাষা বলছে ‘আছে কোন রাহবর যিনি আমাদেরকে হাত ধরে মাওলা পাকের কাছে নিয়ে যাবে?!’ ফেদায়ে মিল্লাত রহ. এর অসমাপ্ত কাজ বড় দরদ আর মুহাব্বতে সামনে এগিয়ে নিবে? অভিভাবকহারা ভগ্ন হৃদয়ে অতি সন্তর্পণে এগিয়ে আসেন ফেদায়ে মিল্লাত রহ. এর হাতে গড়া এক জগদ্বিখ্যাত শিষ্য। যিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চান, বুক ফুলিয়ে, মাথা উঁচিয়ে, গলা ফাটিয়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে চান না! ইনি তো নীরবে সয়ে যাওয়া ঝিনুকের মুক্তা সদৃশ! প্রিয় শায়খ ও মুর্শিদের অর্পিত দায়িত্ব বুঝে নিয়ে পরম মমতায় ধরে ফেলেন অসহায়, এতীম উম্মতের দিকহারা হাত! ‘কোন চিন্তা নাই আজ থেকে আমিই তোমাদের অভিভাবক। বুকে সাহস রাখ, চল আমাবস্যার এ অন্ধকার পথ আল্লাহর আলোয় পাড়ি দিই’। মুর্শিদের রেখে যাওয়া কষ্টি পাথর পরম আদরে আগলে রাখা চাট্টিখানি কথা?! কিন্তু যিনি তাঁর ফেদায়ে মিল্লাত গুরুর হাতে দীক্ষা নিয়েছেন তিনি তো আর হেলাফেলা কেউ নন তিনিও উম্মতের জন্য উৎসর্গিত এক প্রাণ ‘ফেদায়ে উম্মত’। আকাবিরে দেওবন্দের চেতনায় উজ্জীবিত এক সত্তা ও তাঁদের মিছিলে শরিক হওয়া উম্মত প্রেমিক, সেবা ও খেদমতের ক্ষেত্রে দরদী সেবক, শিক্ষা ও গবেষণার ময়দানে একজন ধীমান ও বিদগ্ধ গবেষক, রচনা ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী লেখক ও সাংবাদিক, যুদ্ধের ময়দানে একজন কুশলি ও বাহাদুর সেনাপতি, সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে একজন প্রজ্ঞাবান সমাজ সংস্কারক, ইহসান ও তাযকিয়ার ক্ষেত্রে মুতাযাররী- বিনয়াবনত ও খাওফে ইলাহীর তাড়নায় প্রকম্পিত এক বান্দা, শীতল মস্তিষ্কের আলেম ‘আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা.’।

উম্মতের কল্যাণে আপাদমস্তক কাজে ডুবে থাকা এ মহান সত্তার খিদমাতের বিবরণ কয়টা দিব? এ যে সমুদ্রকে কলসির ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস! তারপরও জাতীকে মনে করিয়ে দিই তাঁর ফেদায়ে উম্মত হওয়ার কিছু দিক-

এক. সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী দল হয়েও মুসলমানরা যখন সন্ত্রাসদের ফাপরের মুখোমুখি হল, সন্ত্রাসী আর গুন্ডারা নিজেদের অন্যায় অপকর্ম সরলমনা মুসলমানদের উপর জঙ্গি জঙ্গি বলে চালিয়ে দিতে চাইল ঠিক তখন দারুল উলূম দেওবন্দের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিরোধী’ ফতোয়াকে সঙ্গে নিয়ে এক লক্ষ উলামায়ে কেরামের স্বাক্ষর জোগাড় করে জাতিসংঘ পাঠিয়ে দিলেন, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন রাস্ট্রের দূতদের কাছে এর কপি দিয়ে আসলেন। বিশ্ব সন্ত্রাসের মদদদাতা, আন্তর্জাতিক মোড়ল আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের কো স্থান নেই। তাঁর এ নির্বিকার শক্তিশালী উচ্চারণ ও পদক্ষেপে জামাত-শিবির, আই এস, আল কায়েদাসহ ইসলামের নামে প্রচলিত সকল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হা হয়ে রইল! আন্তর্জাতিক সকল সন্ত্রাসী দেশ ও দল ‘লা জওয়াব’ হয়ে গেল!

দুই. সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম,সাহাবায়ে কেরাম ও দ্বীনের মৌলিক শত্রু হিসেবে ময়দানে উপস্থিত হল আবুল ‘আলা মওদুদীর জামাতে ইসলামী’ ইসলামের নামে সরলমনা মুসলমানদের ধোঁকায় ফেলতে লাগল সুচতুর ভাবে। উলামায়ে দেওবন্দ দ্বীন রক্ষার তাগিদে এদের টুটি চেপে ধরলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, কতিপয় নামধারী অসাধু আলেম উলামা এদের থেকে সস্তায় বস্তা ভরে ক্ষীণস্বরে ওদের গুনগান গাইতে লাগল। যার শরীরে উলামায়ে দেওবন্দের পূতপবিত্র শোণিত ধারা বইছে তিনি কি আর চুপ থাকতে পারেন! খাওফে এলাহির তাড়নায় প্রকম্পিত হয়ে ময়দানে নেমে এলেন এক ফেদায়ে উম্মত! চার দলীয় জোটের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে জামাত শিবিরের ভ্রান্ত আক্বিদার মুখোশ একে একে ছিন্ন ভিন্ন করতে থাকলেন ঈমানী দৃঢ়তায় বলীয়ান হয়ে।

জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে, কারার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দীর্ঘ ছয়মাস আটকে রেখে ফেদায়ে উম্মতের কন্ঠ স্তব্ধ করতে চাইল কানা দাজ্জালের সহচররা! কিন্তু ওরা হেরে গেল মর্দে মুজাহিদ আল্লামা মাসঊদের ঈমানী শক্তি ও ঐশী সাহায্যের কাছে! শেষমেষ ফেদায়ে উম্মতের ঈমানী শক্তি ও খোদা প্রদত্ত রহমতে তাঁকে বেকসুর খালাস করে দিতে বাধ্য হল কানা দাজ্জালের ভয়াল চক্রের সদস্যরা।

তিন. মিয়ানমারের অসহনীয় জুলুম থেকে বাঁচতে যখন লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গারা সহায় সম্পত্তি সব ফেলে নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ আসল তখন উম্মতের এই দরদী সেবক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলেন রোহিঙ্গাদের দেখতে, তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে! আহ! কোথায় পাবে এমন উম্মত পাগল দরদী সেবককে?

চার. ইহুদীরা তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ‘তাবলীগ বিভক্তির’ দ্বারপ্রান্তে যখন পৌঁছে গেল ঠিক তখনই উম্মতকে বিভক্তির হাত থেকে ঠেকাতে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন হযরত ফেদায়ে উম্মত দা.বা.। বরকতময় কাবার গিলাফ ধরে, বিরল সম্মানের অধিকারী হয়ে কাবা শরীফের অভ্যন্তরে ঢুকে পাগলপারা হয়ে আল্লাহ পাকের কাছে কেঁদেকেটে বুক ভাসালেন উম্মতকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য! জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েও উম্মতের চিন্তায় বিভোর হয়ে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়ালেন, পথ যাত্রা করলেন, ইসলাহী মজলিস করলেন! তবুও যদি উম্মতকে বিভক্তির হাত থেকে বাঁচানো যায়!

পাঁচ. করোনা আর বন্যায় যখন নাকাল দেশ চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে বাংলার মানুষ, দুমুঠো অন্যের জন্য পাগলপারা, দিশেহারা বনী আদম ঠিক তখন অসহায় মানুষের সহায় হিসেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন আমাদের ফেদায়ে উম্মত আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা.। ৬৪ জেলার শহর থেকে শহর গঞ্জে থেকে গ্রাম সবখানেই পাঠিয়ে দিলেন প্রয়োজনীয় খাবার-দাবার, ত্রাণ সামগ্রী।

উম্মতের জন্য উৎসর্গিত এক প্রাণের সহস্র কর্মময় অবদান থেকে মাত্র দু’চারটি উদাহরণ তুলে ধরলাম মাত্র! কূপের কি অধিকার আছে সমুদ্রকে নিয়ে কথা বলা?! উম্মতের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়া দূর্লভ এসকল মহান ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে শুধু জোলায়খার আমন্ত্রণে আসা মহিলাদের সুরে সুর মিলাতে পারি ‘মা হাযা ইল্লা মালাকুন কারীম’।

পরিশেষে বলতে চাই, ফেদায়ে উম্মতের পরে নতুন কোন উৎসর্গিত প্রাণ আছো উম্মতের হাল ধরার জন্য। তৈরী হয়ে নাও কেউ, নইলে এই উম্মতের কপালে দুর্ভোগ রয়েছে!

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *