মমতার চীন সফরে দিল্লির আপত্তি

মমতার চীন সফরে দিল্লির আপত্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ● পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত চীন সফরে আপত্তি জানিয়েছে ভারত সরকার। জুনে ওই সফরে তাকে ‘ক্লিয়ারেন্স’ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দিল্লি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ভারতীয় কোন সিনিয়র রাজনীতিকের চীন সফরের এখন উপযুক্ত সময় নয়। চীনে শানডং-এর মতো প্রদেশ সফর করার কথা ছিল মমতার। সাউথ এশিয়া ভিউ ডট কম-এ এ কথা লিখেছেন সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক। আগামী মাসে চীনে হতে যাচ্ছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ের ওপর বড় ধরনের এক সম্মেলন। এতে ভারত যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর পরই কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মমতার সফরে ক্লিয়ারেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলো। ওদিকে চীন বলেছে, ভারত যদি ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ সম্মেলনে যোগ না দেয় তাহলে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

তারা আরও জানিয়ে দিয়েছে, বেইজিংয়ের এ সম্মেলনে যদি ভারত যোগ না দেয় তাহলে এ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ইন্ডিয়া-রাশিয়া-চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবে না চীন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর। এর তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। এক্ষেত্রে নিজের সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছে ভারত সরকার। এছাড়া সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশ সফর করেছেন তিব্বতের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা দালাই লামা। তার এ সফরের ঘোরতর বিরোধিতা করেছিল চীন। কিন্তু তাদের সে কথায় কান দেয়নি ভারত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, দালাইলামার ওই সফরের সময় চীন আমাদেরকে যেভাবে হুমকি দিয়েছে তা অপ্রত্যাশিত। বেইজিং যখন আমাদের প্রতি এতটা আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে পারে তখন কিভাবে আমাদের রাজনীতিকরা চীন সফরে যেতে পারেন! দালাইলামা একজন ধর্মীয় নেতা। তার অরুণাচল প্রদেশ সফরের সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। এমন সফরে তিনি এবারই প্রথম যাননি। ওদিকে নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপে ভারতের যোগ দেয়া নিয়ে চীন তীব্র বিরোধিতা করেছিল। জাতিসংঘে জৈশ ই মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষণার একটি প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছিল তারা।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এই টানাপড়েন সত্ত্বেও ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সেদেশের সরকার। সম্প্রতি মমতা সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে আমাদের দল চীন সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছে। অনেকবার তারা আমাকে অনুরোধ করেছে। সম্ভবত জুনে চার থেকে পাঁচ দিনের জন্য সেই সফরে যেতে পারি। তারা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে চায়। এ জন্যই আমি চীন সফরে যেতে চাই। মমতার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছেন, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউনচাকো ২০১৫ সালে কলকাতা সফর করেন। তখনই চীন সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে মমতাকে ওই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারপর থেকেই চীনের সব প্রতিনিধি ভারত সফরে এসে মমতাকে চীন সফরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছে। এ বছরের মার্চে মমতার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ভারতে চীনা রাষ্ট্রদূত লাউ ঝাহুই।

তার সঙ্গে ছিল ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ওই সাক্ষাতের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী কারখানা, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *