যার লিখনী আমাকে আন্দোলিত করে

যার লিখনী আমাকে আন্দোলিত করে

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

সামান্য এক কলাম লেখা পড়েই অন্তরজ্বালা বেড়ে গেল। কী যে কলমী শক্তি আল্লাহ তাআলা তাঁকে দিয়েছেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও তাঁর কলমের ধার কমেনি। মনে হচ্ছে তিনি এখনো যুবক। সেই আশি-নব্বই দশকে যেভাবে লিখতেন, এখনো তার ব্যতিক্রম নেই! বরং তাঁর লিখনীর ভাব-গতি যেন এখন আর খুঁতহীন। প্রতি বাক্যে পাঠককে আন্দোলিত করে। হৃদয় মন্দিরে আঘাত করে ভাবার্থগুলো। প্রতিটি শব্দতে চুম্বাকার্ষণ। মানুষকে চম্বুকের মত টানতে থাকে। লেখাগুলো পড়া শুরু হলে আর থামতে ইচ্ছে করে না। আকর্ষণ বাড়তে থাকে। সামনে কী আছে? সেটা জানার অভিপ্রায় জেগে ওঠে প্রত্যেক পাঠকের।

তিনি আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। যাকে বলা হয় শাইখুল ইসলাম। যিনি ওলামায়ে দেওবন্দের সূর্যসন্তান। শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.) এর যোগ্য উত্তরসুরী। প্রতিটি কর্মে শাইখুল মাদানীকে অনুসরণ করেন। একাবিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিকালে ওলামায়ে দেওবন্দের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে তিনি অটল-অবিচল। হাজারো ঝড়ো হাওয়ায় মাসলাকে দেওবন্দীকে আগলে রাখেন।

এই মহান ব্যক্তি আমাদের গর্ব। তিনি যেন অতুলনীয়। পুরো উপমহাদেশের মাঝে এমন যোগ্য এবং চতুর্মুখিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি পাওয়া মেলাভার। এমন তুখোড় মেধাবী এবং কর্মেযজ্ঞে খ্যাতি অর্জন ও দেওবন্দী মাসলাক-মাশরাবের উপর স্পাতের ন্যায় অটল-অবিচল থাকার মানুষ বড্ড অভাব।

মানুষের একদিকের যোগ্যতা থাকলে অন্য দিকে দুর্বলতা দেখা যায়। একদিকে খ্যাতি অর্জন করলে অন্য দিকে অন্ধকার ছেঁয়ে যায়। কিন্তু আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এমন এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর কোন দিকে যেন ভাটা পড়েনি। প্রতিটি সেক্টরে সফলতার সাক্ষর রেখেছেন। ছাত্রজীবন থেকে নিয়ে কর্মজীবন। দ্বীনী মাদারিসের আঙিনা থেকে আর্ন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকল ক্ষেত্রে তিনি আলো ছড়িয়েছেন। অধ্যাপনা বলেন আর প্রশাসনিক কার্যক্রম, সকল বিভাগে সফল। সবখানে তাঁর খ্যাতি।

ইলমে হাদীসের দরসের আলোকিত এক ব্যক্তি। যে আলোয় আলোকিত হাজারো আলেম। এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম মাদানী (রহ.) এর ফয়ুজে ধন্য তিনি। কেননা তাঁরই উস্তাদ আল্লামা কাজী মুতাসিত বিল্লাহ (রহ.)। যিনি হযরত মাদানীর প্রিয় শাগরেদ। হাদীসের সুত্রপরম্পরা তাঁর সঙ্গেই। মাত্র একজন ব্যক্তি মাঝখানে। আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ যিনি শাইখুল ইসলাম মাদানী থেকে থেকে ফুয়ুজ-বারাকাতে সিক্ত হয়ে প্রিয় শাগরেদদের মাঝে পৌছেছেন। এজন্য এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত আল্লামা মাসঊদ সাহেবের দরস।

লিখনীতে আল্লামা মাসঊদ তুলনাহীন। একজন দেওবন্দী আলেমের কলমে এমন শক্তি খুব কম দেখা যায়। ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির ময়দানে সরব তিনি। তাছাড়া ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা। শব্দ চয়নে অনন্য। চমৎকার থাকে বাক্যের গাঁথুনি। এমন সাবলিল-সুন্দরভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেন, পাঠক যেন এক স্বাসে পড়ে ফেলতে চায়। সেই আশির দশকের শেষের দিকে পড়েছি। ‘মাসিক পাথেয়’ এর নিয়মিত পাঠক ছিলাম তখন। প্রতিটি সংখ্যার সম্পাদকীয় ছিল আকর্ষনীয়। যা বারবার পড়তে ইচ্ছে করত।

জীবনে বহু লেখালেখি করেছেন। তাঁর লেখা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ব বিদ্যালয়ে পাঠ্য তালিকায় এখন তাঁর লিখনী। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অসংখ্য বইয়ের অনুবাদ এবং সম্পাদনায় অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত মহারথীদের সাথে জুটি বেঁধে তাঁর কর্মযজ্ঞ চালিয়েছেন। একজন দেওবন্দী আলেম হয়ে বাংলাভাষা সাহিত্যের দিকপালে রুপান্তরিত হয়েছেন তিনি।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদার্শ নিয়ে লিখলেন। বহু চড়াই- উৎরাই পেরিয়ে এবং সীমাহীন পরিশ্রম ব্যয় করে এক ইতিহাস রচনা করলেন। ‘আল্লাহর পরে শ্রেষ্ঠ যিনি’। বইটি কেবলমাত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো সবখানে ছড়ায়নি। যারা হাতে পেয়েছেন, কিছু চম্বুকাংশ তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে। তাতেই সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। সুবাতাস বইছে। পাঠককে ভিন্ন জগতে নিয়ে যাচ্ছে। সামান্য এক পৃষ্টার লেখা পড়ে মোহিত হচ্ছে সকলে।

পরিশেষে প্রিয় শায়েখ ও মুর্শিদ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের সুস্বাস্থ্য ও নেক হায়াত কামনা করি। আল্লাহ তাঁকে উভয় জাহানে কামিয়াব করুন। আমিন।

  • লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *