- আমিনুল ইসলাম কাসেমী
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। একজন খ্যাতিমান আলেমেদ্বীন। ওলামায়ে দেওবন্দের সূর্যসন্তান। ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী (রহ.)-এর খলিফা। বর্তমান সর্ত্তোদ্ধ বয়স চলছে তাঁর। বয়সের ভারে এখন খানিকটা দুর্বল। কিছুদিন আগে হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখন অনেকটা সুস্থ। তবে তিনি যে বার্ধেক্যে পৌঁছে গেছেন এটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আল্লামা মাসঊদ সাহেব একজন আপোসহীন ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে ফেরাকে বাতেলার ব্যাপারে তিনি স্পষ্টবাদী। এব্যাপারে কোন কপটতা নেই। নেই কোনো লুকোচুরি। তিনি সরাসরি বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বাতিল যতই শক্তিশালী হোক না কেন, নির্ভিকভাবে তিনি মোকাবেলা করেন। কোনো জেল-জুলুমের ভয় পান না। বরং বীরের মত হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে। আমরা ২০০৫ সনের দিকে দেখেছিলাম তাঁর সাহসিকতা। দেখেছিলাম তিনি ঈমানের বলে কত বলীয়ান। একটা ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আদালতে হুঙ্কার দিয়ে ওঠেছিলেন। বিন্দু পরিমাণ ভয়-ডর তাঁর মধ্যে দেখি নাই।
তবে আল্লামা মাসঊদ সাহেবের বাতিলের বিরুদ্ধে আপোসহীন এবং দৃঢ় অবস্হানের কারণে তিনি এক শ্রেণীর মানুষের কাছে সমালোচনার পাত্র হয়েছেন। কখনো সতীর্থদের রোষানলে পড়েছেন। ভুল বোঝা হয়েছে বহুবার। যে কারণে বহু গ্লানি সহ্য করেছেন তিনি। বিশেষ করে ফেরাকে বাতেলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতিত। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। বহু জুলুম-নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু আল্লামা মাসঊদ সাহেব কখনো বিচলিত হননি। বরং হক-হক্কানিয়্যাতের মশাল হাতে নিয়ে ছুটে চলেছেন।
কত ভাবে যে হেনেস্তা করা হয়েছে তাঁকে। তাঁর কোনো হিসাব নেই। কত যে অপমানের খড়গ মাথায় ছিল তাঁর। সেগুলো বর্ননার ভাষাও নেই। তবে তিনি একটুও ঘাবড়াননি। এমনকি হক-হক্কানিয়্যাতের মিশন থেকে পিছপা হননি। জেলে যাওয়ার আগেও তিনি যেমন বাতিলকে ভয় করেনি। জেল থেকে আসার পরেও তিনি বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার।
নববী আখলাক এবং আকাবির- আছলাফের আদর্শে অনুপ্রাণিত এক ব্যক্তিত্ব। আমাদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেন। পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আখলাক যেন তিনি গ্রহণ করেছেন। পেয়ারা হাবীবকে কেউ কষ্ট দিলে তাঁকে ক্ষমা করে দিতেন, সেটা আর মনে রাখতেন না। তার জন্য দুআ করতেন। আমাদের আকাবির-আছলাফের এমন গুনাবলী ছিল। ঠিক আল্লামা মাসঊদ সাহেব যেন সে আখলাক গ্রহণ করেছেন। তাঁকে স্বজাতি ভায়েরা এক সময় অনেক কটু কথা বলেছে। কেউ তাঁর ব্যাপারে জবান দারাজি করেছে, কিন্তু কোনো প্রতিউত্তর তিনি করেননি। কারো কথার পাল্টা জওয়াব দেননি। বরং হাসিমুখে সব গ্রহণ করেছেন।
কিছুদিন আগে তিনি যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন কারাবন্দী আলেমদের জন্য দুআ করেন। নিজে ঠিকমত চলতে পারেন না। অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন, কিন্তু কারাবন্দী আলেমদের কথা ভোলেননি। তাদের মুক্তির জন্য দুআ করেছেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়েও তিনি বসে নেই। কারাবন্দী আলেমদের নিয়ে তাঁর বড় ভাবনা।
বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়ে ওলামায়ে কেরাম এখন তাঁর সাথে দেখা করছেন। বড্ড ভালো লাগছে বিষয়টা। একটু দেরিতে হলেও ওলামায়ে কেরাম এখন ইকরার রুট ব্যবহার করছেন। এটা আলেম সমাজের এগিয়ে যাওয়ার মাইলফলক। আল্লামা মাসঊদ সাহেবও বড় উদার মনের ব্যক্তিত্ব। তিনি তো আলেমদের পরম বন্ধু। নিজের বুকে টেনে নিচ্ছেন সকলকে। এঁরা যেন তাঁর প্রাণের মানুষ।
বর্তমানে আমাদের মুরুব্বী সংখ্যা কমে গেছে। মাত্র এক-দু’বছরে বহু মুরুব্বীকে হারিয়েছি। এখন এঁরাই আমাদের রাহবার। যারা বেঁচে আছেন তাঁরা সকলেই আমাদের অভিভাবক। এসকল মনিষীদের এখন কদরদানী করা উচিত। নিঃস্বার্থভাবে দ্বীনের কান্ডারী হিসাবে আলেমদের তিনি সুপরামর্শ দিবেন। তাঁর থেকে হাজারো ওলামায়েকেরাম উপকৃত হবে। এই প্রত্যাশা এখন সকলের। আল্লাহ তায়ালা আল্লামা মাসঊদ সাহেবকে নেক হায়াত দান করুন। আমিন।
- লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট