জাতির ক্রান্তিলগ্নে বাস্তবধর্মী হতে শিখুন

জাতির ক্রান্তিলগ্নে বাস্তবধর্মী হতে শিখুন

জাতির ক্রান্তিলগ্নে বাস্তবধর্মী হতে শিখুন

ইশতিয়াক আহমাদ ❑ নানা তন্ত্র-মন্ত্রের এ পৃথিবীতে কেউই রাখতে পারেনি মানবতা বা মানবধর্মের স্বাক্ষর। একমাত্র ইসলামই মানবতা বা মানব ধর্ম। যা এ পরিস্থিতিতে আরো বেশি অনুমেয়। আমার ছোট বোনের বিধর্মী বান্ধবী মহামারি থেকে বাঁচার জন্য তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে কোন মন্ত্র না পেয়ে ইসলামে কি দুআ বা মন্ত্র আছে তা শিখে নিয়েছে। এখানেই মানব রচিত জীবন বিধান আর স্রষ্টার দেয়া জীবন বিধানের পার্থক্য। কারণ একজন মানুষ জানেনা যে শত বছর পরে কি প্রয়োজনে পৃথিবী হাতড়ে বেড়াবে। এখানেই মানব সিমাবদ্ধতা আর স্রষ্টার মহানতা ফুটে উঠে।

ইসলাম এতই সমন্বিত এক ধর্ম যে, বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বসে, যে কেউ সঠিক পন্থায় ইসলামের জ্ঞান চর্চা করলে অন্য প্রান্তের এমন সঠিক পদ্ধতি অবলম্বির সাথে তার অভিন্নতা পরিলক্ষিত হবেই মৌলিক বিষয়ে। শাখাগত বিষয়ে সামান্নতম পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হতে পারে। তবে তাতে থাকবে না কোন বিদ্বেষের লেশ মাত্র। উভয়েই অন্যের মতামতকে ঢের সম্মান ও মর্যাদার সাথেই নেবে। যদিও সেটাকে অনুকরণীয় বা অনুসরণীয় না মনে করেন।

আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় এনে কেন এসব মিথ্যাচারের বিচার করা হয় না তা আমার বোধগম্ম নয়!

যার নজীর সলফে সলেহীন থেকে ধারা পরম্পরায় আমাদের আকাবীরে দেওবন্দের মধ্যে অসংখ্য বিদ্যমান। কিন্তু কিছুদিন হলো কেমন ছন্দ পতন দেখছি এ পূণ্যময়ী ধারায়, অভিন্নতা বা সম্মান, শ্রোদ্ধার সে যাইগাতে কে বা কারা যেন ভিন্নতা বিতশ্রোদ্ধ ও অনাস্থার পেরেক ঠুকতে চায়।

কিছুদিন আগেই দেখলাম, আকাবীরে দেওবন্দ কর্তিক ঘোষীত গোমরাহ মওদূদীবাদীদের মুক্তির দাবীতে কাউকে লাইভে আসতে বিবৃতি দিতে, যদিও সেখানে কিছু মুরুব্বীদের নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় এনে কেন এসব মিথ্যাচারের বিচার করা হয় না তা আমার বোধগম্ম নয়!

এখন কোরানা ভাইরাস নিয়ে ইসলামি ফাউন্ডেশনের আহবানে উলামায়ে কেরামের দুইটি ইলমী পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। সময়ের বিদগ্ধ আলেম ও গবেষকগণ সকলেই উপস্থিত ছিলেন। যাদের উপর এ জাতি আস্থা করতে পারে বা করে আসছে কয়েকযুগ ধরে। সেখানে সর্বশেষ উলামায়ে কেরাম মসজিদে মুসল্লিদের আগমন ও জমায়েতের ব্যাপারে যে কথা বলেছেন তা হলো মসজিদের বিষয়টি এখানে আসছে প্রাসঙ্গিক ভাবে, মূলত জমায়েতই হলো মৌলিক প্রবলেম এ ভাইরাসের ক্ষেত্রে। তাই উনারা বললেন যে বাজারের ভিড় সীমিত করণের পূর্বে মসজিদে জমায়েত সীমিত করা সমীচীন নয়।

ইসলামকে এতটা অবৈজ্ঞানিক আমরা নিজেদের আবেগের বসে কিভাবে বানাতে পারি?

উনারা যৌক্তিকতার আলোকে বলেছেন একজন মানুষের বাজারে না গেলে যেমন খাবারের অভাবে জীবন বাঁচে না, তেমনি মসজিদে না গেলে একজন মানুষের অন্তরাত্মা মরে যাবে। সে শুদ্ধতার সাথে পবিত্রভাবে বাঁচার খোরাক পাবে না। কিন্তু এখন যখন সরকার বাজারে উপস্থিতি সীমিত করেছে, জমায়েত বন্দ করেছে, এমন কি গ্রামের বাজারেও ঔষধের দোকান ছাড়া আর কোন দোকান খোলা নেই, তখন সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস এড়াতে মসজিদে জমায়েতের সীমিত করণের মাধ্যমে মসজিদের আমল জারি রাখা এবং ভাইরাস থেকে বাঁচার এ প্রয়াস কি শরিয়াহ বিরোধী?

যেখানে হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসুলেশনের মত বৈজ্ঞানিক আবিস্কার গুলো নবীজি সা. এর হাদীস অনুসৃত, সেখানে ইসলামকে এতটা অবৈজ্ঞানিক আমরা নিজেদের আবেগের বসে কিভাবে বানাতে পারি?

যেখানে নবীজি সা. প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যার যার স্থানে বা ঘরে নামাজ পড়ে নিতে বলেছেন, সেখানে এই মহামারি দুর্যোগে যারা জমায়েতের জন্য মসজিদ খুলে দিতে বলছেন, তাদের কাছে তরল আবেগ আর রাষ্টীয় বিরোধীতা ছাড়া কোরআন হাদীস বা ফিকহে ইসলামীর কোন নুসুস কি আছে নিজেদের এ আবেগ তাড়িত দাবীর স্বপক্ষে।

সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে আমার কাছে এটাকে একটা ষড়যন্ত্র মনে হয়েছে, সেই দীর্ঘদিনের অভিন্নতার দেয়ালে ভিন্নতার চিত্র এঁকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র, আস্থা ও শ্রোদ্ধার পাত্রে বিতশ্রোদ্ধ আর অনাস্থার বিষ ঢেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র।

কারা ওরা, যারা সর্বজন বিদীত মুরুব্বি আল্লামা আহমদ শফী দা.বা.-এর মুকাবেলায় যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দা. বা.-কে দাড় করাতে চায়?

ওরা যে বা যারাই হোক ওদের উদ্যেশ্য মন্দ তাতে কোন সন্দেহ নেই। ওরা আমাদের মাঝ থেকে আমাদের সেরতাজ মুরুব্বী ও আকাবীর উলামায়ে করামের প্রতি লালন করা আস্থা ভক্তি ও শ্রোদ্ধাকে মুছে দিতে চায়।
ওরা সমাজে আলেম বিদ্বেষের বিজ বপন করতে চায়। ওরা উলামা মাশায়েখ থেকে জন সাধারণকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। ওদের এ ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।

লেখক : ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *