১১ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ২১শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
প্রিয় বন্ধু মাওলানা লিয়াকত আলী মাসউদ সাহেবের পুরনো একটা লেখা আমাকে কাবু করে ফেলেছে। লেখাটি প্রিয় শায়েখ ও মুর্শিদ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবকে কেন্দ্র করে।
২০১৫ সনেরর কথা। ফেদায়ে মিল্লাতের খলিফা শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (পিজি হসপিটালে) গেলেন। সে সময়ে হাসপাতালের কেবিনে শত শত উলামায়ে কেরাম তাঁর সাথে দেখা করার জন্য ভিড় জমাতে লাগল। এমনকি লিয়াকত আলী মাসউদ ভাই তাঁর কিছু ছাত্র সহ আল্লামা মাসঊদ সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন তখন। সেই সাক্ষাতকালিন আল্লামা মাসঊদ সাহেবের কিছু নসীহত এবং কথোপকথন ছিল অত্যন্ত হৃদয় কাড়া। যে কথাগুলো সত্যি প্রাণ ছুঁয়ে যায়। একজন খোদাপ্রেমিকের অন্তর অবশ্যই কেড়ে নিবে। মন-হৃদয় ছুটে যাবে মহান রবের দরবারে। সে নসীহতগুলো প্রিয় বন্ধুর কলমে তখন উঠে এসেছিল। ফেসবুকের টাইম লাইনে পোষ্ট করেছিলেন। সেই পুরনো লেখাটা আবার পড়ে আমি অশেষ মুগ্ধ হয়েছি।
আল্লামা মাসঊদ সাহেব তাঁর কেবিনে উপস্থিত অর্ধ শত আলেম এবং তালেবুল ইলমদের যে খোরাক দিয়েছিলেন সেটা অবিস্মরণীয়। তাঁর প্রতিটি কথা যেন হৃদয়ে আঘাত করে। অন্তরের অন্তস্হলে প্রবেশ করে সে বাক্যগুলো। তিনি বলেন-
‘দুআর শক্তি সবচেয়ে বেশী। মানুষ যখন প্রাণ খুলে দুআ করে,তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়ার দ্বার অবারিত করেন। যেমন দুগ্ধবর্তী মায়ের কথা চিন্তা করুন। মাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললেও তাতে কোন এক ফোটা দুধ পাওয়া যায় না। কিন্তু শিশুর যখন ক্ষুধা লাগে, কান্না শুরু করে দুধের জন্য, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মায়ের বুকে দুধের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তদ্রুপ বান্দা যখন দরদপূর্ণ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকে, তখন আল্লাহ তায়ালা সব হাজত পুরণ করে দেন। তার সব প্রার্থনা কবুল করেন। যেমন নাকি বাচ্চার চাহাত অনুযায়ী বাচ্চার মায়ের বুকে দুধ আসে, তেমনি গোনাহগার বান্দা আল্লাহর দরবারে মিনতি অনুযায়ী ক্ষমার দরওয়াজা প্রসারিত হতে থাকে।’
আল্লামা মাসঊদ সাহেবের কথাগুলো অন্তরে রেখাপাত করল। আসলে অনেক মুল্যবান কথা। বিশেষ করে এই মাহে রমজানের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহুর্ত অনেক মুল্যবান। দেখতে দেখতে আমরা রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে পৌছে যাচ্ছি। কদিন পরেই শেষ দশকের দেখা মিলে যাবে। একটা সুবর্ণ সময় আমাদের সামনে। যদি আমরা একটু কাজে লাগাতে পারি, তাহলে কামিয়াবির চাবিকাঠি মিলে যাবে।
মাহে রমজান দুআ কবুলের মাস। বান্দার আকুতি তিনি কবুল কবুল করে থাকেন। দশকের তো বিশেষ মর্যাদা রাখে। যেখানে শবে কদর রয়েছে। সুতরাং অবহেলা করা ঠিক হবে না। ইবাদতে লেগে যেতে হবে সবার।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব রমজান শুরু হওয়ার পূর্বেই সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন, আসুন! মাহে রমজান আমরা ইবাদতে কাটিয়ে দেই। সত্যি মাহে রমজান ইবাদতের মাস। যেটা কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পেয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইবাদতে কাটিয়েছেন এবং উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তাই আমাদেরও সেই মহান প্রভুর ইবাদতের মাধ্যমে রমজান পার করতে হবে।
আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে রোনাজারি করা চাই। কেননা অবিরাম কষাঘাতে বন্ধ দরজা খুলে যায়। এই মাসে বারবার তাঁর দরবারে দুআ করতে থাকলে অবশ্যই তিনি কবুল করবেন। তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট