বিপদ আর মুসিবত আমরা যা-ই বলি না কেন সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে না আসার বিকল্প নেই। তিনিই একমাত্র আশ্রয়দাতা। আজকে বিশ্বব্যাপী যে শরণার্থী সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে তাতেও একমাত্র ভরসা তিনিই। ফায়সালাটা তিনিই দেবেন। তার সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। এর বাইরে কিছু নেই। আমরা কেবলই কিছু চেষ্টা করতে পারি মাত্র। মিয়ানমারের ছুটে আসা মুসলমানের জীবনে যে ভয়াবহ বিপদের ঘনঘটা ঘুরছে, আর আতিথেয়তাপ্রবণ এই বাঙালিদের সেবামূলক শ্রেষ্ঠ এই মানসকিতার বিজয় দেখে আমরা আপ্লুত। কারও হৃদয়কে দেখি পাথরের মতো শক্ত আর এই মনুষ্যশ্রেণির লালসবুজের কিছু মানুষকে দেখতে পাচ্ছি হৃদয় উজার করে মানুষকে বাসছে ভালো। সবই আল্লাহর রহমত। আল্লাহ মানুষের ভালো চান, মঙ্গল চান, তাঁর চেয়ে কল্যাণকামী আর কেউ নেই। আল্লাহ মানুষকে নিজের হাতে বানিয়েছেন। তাকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কোন জায়গায় তার ভালাই আছে, কোন জায়গায় তার কল্যাণ আছে, কোন হালে তার কল্যাণ আছে, কী অবস্থায় তার মঙ্গল হবে এ কথাটাও আল্লাহ্ তাআলাই সবচেয়ে বেশি জানেন।
কুরআনুম মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। [সূরা বাকারা : আয়াত ১০৯]
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই; এবং যে দিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন, সে দিকই আল্লাহ আছেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। [সূরা বাকারা : আয়াত ১১৫]
আল্লাহ তাআলাই জানেন, আমরা কোন অবস্থায় থাকলে আমাদের ভালো হবে। তাই আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের ভালাই চেয়েছেন, আমাদের কল্যাণ চেয়েছেন যে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এরা আমার কাছে দুআ করুক, কান্নাকাটি করুক। আসমানের কান্নার সাথে তারাও কাঁদুক। আল্লাহ তাআলার চেয়ে কল্যাণকামী খায়েরখাহ আর কেউ নেই। সুতরাং বান্দার উচিত হলো যেহেতু আমি আমার ভালাই জানি না, আমি আমার ভবিষ্যৎ জানি না, আল্লাহই একমাত্র ভবিষ্যৎ জানেন, আল্লাহই আমার ভালাই জানেন, তাই সব অবস্থায়, সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা, আল্লাহর প্রশংসা করা। সুখে থাকলেও আল্লাহর প্রশংসা, দুঃখে থাকলেও আল্লাহর প্রশংসা। কারণ আমার কাছে যা দুঃখ তা আল্লাহর কাছে আমার জন্য ভালো। আমার কাছে যা সুখ, আমি যা সুখ মনে করছি জানি না এটা ভবিষ্যতে আমার জন্য সুখ কি না। তাই আল্লাহ যে হালে রাখেন সে অবস্থায়ই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা হলো আল্লাহওয়ালাদের গুণ। যাকে বলে রেজা বিল কাজা। আল্লাহ যে অবস্থায় আমাকে রাখেন আমি সে অবস্থা মানি, আমি সে অবস্থায় খুশি। আমি তো গোলাম, মুনিব যে অবস্থায় রাখেন আমি সে অবস্থায়ই খুশি। আজ বর্ষণমুখর বৃষ্টিভেজা অবস্থায় আমরাও খুশি আল্লাহ তাআলার উপর। এতে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা, আল্লাহ পাক আমাদের জন্য মঙ্গল রেখেছেন।
বৃষ্টি তো পড়বেই, ভিজতে তো হবেই, আমি চাইলেও হবে, না চাইলেও হবে। একবার আমি ফজরের নামাযে অনেককে দেখলাম, পুরো শরীর বৃষ্টিতে ভেজা। আল্লাহ কিসে মঙ্গল রেখেছেন আমাদের জানা নেই। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আপনি কখন সবচেয়ে বেশি শান্তিতে ছিলেন? ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বলেছিলেন, যখন আমাকে নমরুদের আগুনের কু-ুলিতে রাখা হয়েছিলো। ঐ সময় আমি যে প্রশান্তি পেয়েছি তা আর কখনও পাইনি। দেখছি আগুন, আসলে ছিল সেটা জান্নাত, শান্তির জায়গা।
দাজ্জাল যখন আসবে তখন মানুষকে বাগান দেখাবে। মানুষ দেখবে বাগান কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তার এই প্রতারণার বেহেশতে ঢোকার পরে বুঝতে পারবে এটা তো জাহান্নাম। আর যেখানে দেখবে আগুন, যারা তাকে মানবে না, ঈমানের উপরে দৃঢ় থাকবে, তারা যখন দাজ্জালের আগুনে ঢুকবে, ঢুকে দেখবে যে আগুন নয়, এটা হলো বেহেশত।
সুতরাং আমার দেখা দেখা নয়, আমার দেখার উল্টোও হতে পারে। হযরত আইউব আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আপনার সবচেয়ে সুন্দর আরামের দিন কোনগুলো ছিল? তিনি বললেন, যে কয় বছর আমি রোগে আক্রান্ত ছিলাম। কীড়ায় কীড়ায় জর্জরিত হয়েছিলাম ঐ সময় যে আরাম পেয়েছি আমি, ভালো হয়ে এত আরাম আর পাইনি। জিজ্ঞেস করা হলো কীভাবে এত আরাম পেয়েছেন? অসুস্থতার সময় আল্লাহ একবার সকালে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন আইউব কেমন আছো? বিকালে আরেকবার জিজ্ঞেস করতেন কেমন আছ? কিন্তু ভালো হওয়ার পর আর ডাক দেননি আর জিজ্ঞেস করেননি আইউব কেমন আছো?
আল্লাহর বড় রহমত, আল্লাহর মেহেরবানী আল্লাহর অলী হওয়াকে তিনি অনেক সহজ করেছেন। নিজের মর্জিকে আল্লাহর মর্জি বানানোর মাধ্যমে বেলায়াতের উঁচু স্তরে পৌঁছা যায়। সেখানে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এক দিনের ভিতরে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। এটা কি আল্লাহর অনেক বড় মেহেরবানী নয়? এটা আল্লাহর অনেক বড় রহমত নয়? আমরা কোন অবস্থা দেখব আমাদের মোয়াফেক, কোন অবস্থা দেখব আমাদের মোয়াফেক না। কোন অবস্থা দেখব আমার অনুকূল, কোন অবস্থা দেখব আমার অনুকূল নয়। কিন্তু সর্বাবস্থায়ই মগ্ন হয়ে থাকতে হবে আল্লাহতে। এর নামই বেলায়াত। এর নামই আল্লাহকে পাওয়া।
সবসময় মহান আল্লাহকেই ডাকতে হবে। তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। আমরা যা করবো, আল্লাহর জন্যই করবো। প্রচারের উদ্দেশে নয়। মানুষকে দেখাতে নয়। দান থেকে শুরু করে সবধরনের আমল করব এই বিশ্বাসের সঙ্গে আমল করব যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন এটাই সত্য। এটা অবশ্যই আমি পাব। আমরা যে অবস্থায় থাকি প্রথম কথা হলো আমরা ঈমানের সাথে থাকব। আমরা সব সময় খেয়াল করব কোনো বদ আমল যেন আমাদের দ্বারা না হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।
পাথেয় ডেস্ক ● অক্টোবর ২০১৭, মাসিক পাথেয়, সম্পাদকীয়